সারাদেশ

তাড়াশে কুঁচিয়া মাছ ধরার ফাঁদ রুহুঙ্গা কাঁধে নিয়ে ছুটছেন স্বপন কুমার

তাড়াশে কুঁচিয়া মাছ ধরার ফাঁদ রুহুঙ্গা কাঁধে নিয়ে ছুটছেন স্বপন কুমার

ছবি : মুন টাইমস নিউজ


প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রাত ৯:৩০

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সকাল হলে বিভিন্ন সড়কে দেখা যায় স্বপন কুমার (৪০) কাঁধে মাছ ধরার খাঁচা নিয়ে হাঁটছেন। তিনি তালম ইউনিয়নের দেওঘর গ্রামের বাসিন্দা। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার চলে অভাবের মধ্যে। স্বপন কুমার জানান, তিনি ২০ বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে কুঁচিয়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার পরিবারে ভাত-কাপড়ের জোগান আসে এই মাছ ধরেই। ফাল্গুন মাস থেকে তার কুঁচিয়া ধরার অভিযান শুরু হয়, যা চলে আশ্বিন মাস পর্যন্ত। বাকী সময় তিনি বাসায় ঘুরে মাছ বিক্রি করেন। পাশাপাশি অল্প কিছু জমিতে ধান চাষও করেন। তিনি আরও জানান, “আগে কেউ কুঁচিয়া ধরত না, কিন্তু বিদেশে এই মাছের চাহিদা আছে। আমি ২০ বছর ধরে কুঁচিয়া ধরছি। ভাটি এলাকায় শিকার করে শিখেছি।” কুঁচিয়া মাছের ফাঁদের নাম ‘রুহুঙ্গা’। এটি বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি, যা মাছ ধরার চাঁইয়ের মতো হলেও আসলে চাঁই নয়। কুঁচিয়া ধরার কৌশল সম্পর্কে স্বপন বলেন, নওগাঁর হাটবাজার এলাকা থেকে ৭০ টাকা দরে রুহুঙ্গা কিনে নিয়ে আসেন। তিনি বিভিন্ন খালে কেঁচো টোপ দিয়ে রুহুঙ্গা পানিতে ডুবিয়ে রাখেন। রাতের বেলায় কুঁচিয়া টোপ খেতে এসে রুহুঙ্গার ফাঁদে আটকা পড়ে। প্রতিদিন তিনি ৫০ থেকে ৬০টি রুহুঙ্গা পানিতে রাখেন। সব কটিতে কুঁচিয়া ধরা পড়ে না, তবে খালি হাতে ফিরে যেতে হয় না। কুঁচিয়াগুলোকে জীবিত রাখতে ড্রামে রাখা হয়, এবং সপ্তাহে দুই দিন পাইকার এসে সেগুলো নিয়ে যান। এক কেজি কুঁচিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। স্বপন কুমার জানান, “কুঁচিয়া ধরতে কষ্ট আছে। তবে এই পেশায় আয় কখনও ৫০ হাজার, আবার কখনও ৫ হাজারও হয়। কুঁচিয়া মাছ ধরতে কোনো বাধা নেই। মাঝে মাঝে নিজেও খাই। খুব স্বাদ!” বর্তমানে স্বপন কুমার ২০টির মতো রুহুঙ্গা তুলে নিয়ে এসেছেন, যেখানে দুই থেকে তিন কেজির মতো কুঁচিয়া পাওয়া গেছে। এই মাছ সাধারণত পুকুর, হাওর-বাঁওড়, খাল বা ধানক্ষেতের তলদেশে এবং মাটির গর্তে বাস করে। স্থানীয় মানুষের খাদ্য তালিকায় এই মাছ না থাকলেও বিদেশে এর চাহিদা আছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে কুঁচিয়া সংগ্রহ করে স্বপন কুমারের মতো অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।