মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা অনেক তথ্য পেয়ে থাকি। মোবাইল ফোন ব্যবহারের যেমন ইতিবাচক দিক আছে তেমন নেতিবাচক দিক ও আছে।
আমাদের হাতে যে ফোনটি আছে এই ফোনটি শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন আসক্তি তৈরি করে।এখন শিশুদের শৈশব কাটছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। বলতে গেলে এটি একটি আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। মোবাইল ফোনে শিশুদের আসক্তি এইটা শুধু একটি পরিবারে নয়, সারা বাংলাদেশের । প্রায়ই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ফোনে আসক্তি দেখে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন। ডিজিটাল বিপ্লবের এ যুগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না এমন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
করোনাকালীন সময়ে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে অনেক। অনলাইন ক্লাসের জন্য কিশোর কিশোরীদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছে অসংখ্য অভিভাবকরা। অনেক অভিভাবক শুধু অনলাইন ক্লাসের সময় তাদের ফোন টা শুধু দিত পরে ক্লাস শেষ হলে নিয়ে নিত।
কিন্তু কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিজস্ব ফোন দিয়েছে এইসময়। ফলে ক্লাস করার পর ও কিছু কিশোর কিশোরী ফোন ব্যবহার করতো। এতে তাদের অনেক বড় আসক্তি তৈরি হয়ে যায়। এখন করোনা স্বভাবিক হওয়ার পর সব আগের মতো হয়ে গেছে। স্কুল কলেজে তারা আবার আগের মতো যাচ্ছে কিন্তু ফোনে আসক্তি তাদের এখনো কমে নি।
বলতে গেলে তাদের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি যেন দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। বাচ্চারা যখন ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ে, তা অশুভ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।
শিশুদের মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপে এত বেশি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ কী? প্রথমত, শহরের অধিকাংশ পরিবারে মা-বাবা দু’জনই চাকরিজীবী। অফিস শেষ করে সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। ফলে শিশুরা মা-বাবার আদর-যত্ন থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হন। তাই তারা বাচ্চাদের অবসর সময় কাটানোর জন্য ফোন, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপ দিচ্ছেন। ফলে শিশুরা সহজেই এসবে আসক্ত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, একসময় শিশুদের খেলাধুলা করার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ ছিল। তখন বাচ্চারা বাইরে খোলা মাঠে খেলাধুলা করত। বর্তমানে খোলা মাঠ যেমন নেই তেমনি ঘরের বাইরে শিশুদের খেলতে পাঠানোর আগে নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবেন অভিভাবকরা। তাই অনেক অভিভাবকই ঘরে বাচ্চাদের গেমস, কার্টুন দেখে সময় কাটানোকে শ্রেয় মনে করেন। তৃতীয়ত, আপনি হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। আপনার পাশে বসে ছোট বাচ্চাটা দুষ্টুমি করছে। তাকে শান্ত রাখার জন্য তার হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব ধরিয়ে দিলেন। গান, কার্টুন বা মজার ভিডিও ছেড়ে দিয়ে তাকে নিমিষেই শান্ত করে আপনি আপনার কাজে মনোনিবেশ করলেন। এভাবেই শিশুরা আসক্ত হচ্ছে।
অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের ফলে বাধাগ্রস্ত হয় শিশুদের মানসিক বিকাশ। মোবাইল ফোনের বিকিরণ থেকে চোখের নানা সমস্যা তৈরি হয় শিশুদের মধ্যে । স্মার্টফোন তথা ইন্টারনেট আসক্তি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধা দেয়। শিশু ধীরে ধীরে অসহিষ্ণু, অসামাজিক ও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ে। শিশুদের আচারন খিটখিটে হয়ে যায়। নৈতিক গুণাবলীর অভাব দেখা দেয়। অনেক সময় ধরে ফোন ব্যবহারের কারণে শিশুরা পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হয়।
এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে অভিভাবকদের এখনই সচেতন হতে হবে। সন্তানকে অধিক সময় দিলে; পারিবারিক ও সামাজিক সংযোগ বাড়লে শিশুদের মোবাইল ফোনে আসক্তি অনেকটা কমে যাবে। ঘরের বাইরে প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিশুদের খেলাধুলা নিশ্চিত করতে পারলে মোবাইল আসক্তি সমস্যা অনেকটা কমে আসবে।
মতামত