সারাদেশ

তাড়াশে ভিকটিম উদ্ধার করতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ, গ্রেপ্তার ৪

তাড়াশে ভিকটিম উদ্ধার করতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ, গ্রেপ্তার ৪

ছবি : মুন টাইমস নিউজ


প্রকাশিত : ১৫ জুন ২০২৪, সন্ধ্যা ৭:১৫

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় ভিকটিম উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজন কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের পংরৌহালী গ্রামে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে পাঁচজন কে নামীয় ও ১৫/২০ কে অজ্ঞাতনামা আসামী করে তাড়াশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন, পংরৌহালী গ্রামের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রুবেল আহম্মেদ (২৯) তার ছোটভাই  আ: রহিম (২৬) ও মা রেনুকা খাতুন (৫০) ও ভিটটিম  সুমাইয়া খাতুন (১৬)। তবে এ ঘটনায় পুলিশ ও গ্রামবাসীর পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, তাদের উপর হামলা হয়েছে অপর দিকে গ্রামবাসী বলছে অপরিচিত হওয়ায় ডাকাত সন্দেহে উল্লাপাড়া থানার পুলিশ কে ঘেরাও করে। পরে তাড়াশ থানা পুলিশ আসলে নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ভিটটিম কে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মামলা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মামলা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ বাজারের বাসিন্দা মোঃ শাহিন আহম্মেদের মেয়ে এস এম সুমাইয়া (১৩) ও একই উপজেলা পংরৌহালী গ্রামের বাসিন্দা ও নওগাঁ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য আফজাল হোসেনের ছেলে মোঃ রক্তিম (১৩) পার্শ্ববর্তী পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া থানার করতকান্দি রস্তুম আলী বহুমুখি উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এবং বিয়ে করার উদ্দ্যেশে ২০২৩ সালের ২৪ মে তারিখে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরের দিন ২৬ মে রক্তিম সহ তার বাবা-মা ও দুই ভাই কে আসামী করে মেয়ের মা মোছাঃ ছালমা খাতুন তাড়াশ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনার পর ১১ জুন ভিকটিম এসএস সুমাইয়া কে তাড়াশ থানা পুলিশ উদ্ধার করে। মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই  আলমগীর হোসেন সিরাজগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করেন। সেখানে ভিকটিম এসএম সুমাইয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  নাহিদ রহমান শরীফের কাছে লিখিত জবানবন্দী দেয়। সেখানে সে লিখিতভাবে জানায়, রক্তিম আমার সহপাঠী। তার থেকে চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক চলছে। আমাদের কথা পরিবার জানতো কিন্তু মেনে নেয় নাই। ওই জবানবন্দিতে ভিকটিম এসএম সুমাইয়া আরো জানায়, ঢাকার জজ কোর্টে গিয়ে তারা বিয়ে করে। বিয়ের দেন মোহর ছিল দুই লক্ষ টাকা। তারপর থেকে গতকাল পর্যন্ত স্বামীস্ত্রী হিসেবে তারা ঢাকাতে ছিলো। পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। তাকে কেউ অপহরণ করেনি। স্বেচ্ছায় রক্তিমের সাথে গিয়ে তাকে বিয়ে করেছি। এরপর আদালত ভিকটিম সুমাইয়া কে তার পরিবারের হেফাজতে দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে মেয়ের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ভিকটিমের পরিবার সিরাজগঞ্জ সদরের হোসেনপুর মহল্লায় বসবাস করতে থাকেন। এ মামলায় দীর্ঘ তদন্ত শেষে তাড়াশ থানা পুলিশ আসামী রক্তিম কে কিশোর আপরাধ ও তার বড়ভাই ছাত্রলীগ নেতা  রুবেল হোসেনকে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দেয়। ওই মামলা সিরাজগঞ্জ আদালতে এখনো চলমান রয়েছে। ওই ঘটনার পর গত ২১ এপ্রিল পৌনে দশটার সময় প্রাইভেট পড়ার কথা বলে ভিকটিম এসএম সুমাইয়া আবারও রক্তিমের সাথে পালিয়ে যায় । এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভিকটিম সুমাইয়ার মা  ছালমা খাতুন আবারও তার মেয়েকে অপহরণ করেছে মর্মে রক্তিমসহ তার এক ভাই ও বাবাসহ ৪/৫ আজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় গত ২৩ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের (সংশোধনী ২০২৩) ধারায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় র‌্যাব-১২ অভিযান চালিয়ে ঢাকা থেকে তাদের কে উদ্ধার করে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। গত ১৪ জুন বিকেলে ভিকটিম সুমাইয়া আবারও পালিয়ে পংরৌহালী গ্রামে তার প্রেমিক রক্তিমের কাছে আসে। তখন ক্ষতিগ্রস্থ রক্তিমের পরিবার পুলিশ ও মেয়ের পরিবার কে ঘটনাটি জানায়। এ দিকে মেয়ের মা সালমা খাতুন তার মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে মর্মে উল্লাপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। প্রত্যক্ষদর্শী শামসুল আলম ও নূর ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে মো: শহিদুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাড়াশ থানাকে না জানিয়েই পংরৌহালী গ্রামে ভিকটিম কে উদ্ধার করতে গেলে, ভিকটিমের ডাক চিৎকারে এলাকাবাসী তাদের কে আটকে রেখে তাড়াশ থানায় খবর দেয়। পরে তাড়াশ থানার পুলিশ গেলে তারা নিশ্চিত হোন ডাকাত নয় বলে। অপর দিকে উল্লাপাড়া থানার উপ পরিদর্শক  শহিদুল ইসলাম বলেন, তাদের উপর আইনী জনতা দলবদ্ধ হয়ে পুলিশের উপর হামলা করে। এতে তিনি সহ দুজন কনেষ্টেবল আহত হয়ে তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের চিকিৎসা নেই। চারজন কে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। সিরাজগঞ্জ জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবি এ্যাডভোকেট মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনা পুলিশের সাথে এবং পুলিশ নিজেই বাদী। তদন্তও করবে পুলিশ। ফলে এ মামলায় নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। উল্লাপাড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত সূত্রধর বলেন, চারজন আসামী কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের কে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। তবে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হবে মর্মে তিনি আস্বস্থ করেন।