জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বিদেশ থেকে শ্বাশুড়ির পাঠানো টাকা চেয়ে না পেয়ে স্ত্রী ও খালা শ্বাশুড়িকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে জামাই এর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হলহলিয়া গ্রামের রুবেল হোসেনের বাড়িতে।
সোমবার (২৭মে) দুপুর ১২ টায় রুবেল হোসেন (৩৬) তার স্ত্রী মৌ আক্তার মিতু (২৫) এর কাছে শ্বাশুড়ির পাঠানো টাকা চাই কিন্তু সেই টাকা দিতে না চাইলে স্ত্রী ও খালা শ্বাশুড়িকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করে। অভিযুক্ত রুবেল হোসেন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা।
পারিবারিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১০-১২ বছর আগে হলহলিয়া গ্রামের মৌ আক্তার মিতুর সঙ্গে রুবেল হোসেনের বিয়ে হয়। তাদের আট বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। মৌ আক্তারের মা কমলা বেগম সাত বছর আগে গৃহপরিচারিকা হিসেবে সৌদি আরব যান। তিনি মেয়েকে উপজেলা সোনামুখী ইউনিয়নের হলহলিয়া নিজের গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করে দেন। গত পাঁচ বছর ধরে মৌ আক্তার মিতু ও স্বামী হলহলিয়া গ্রামে বসবাস করছেন। সৌদি আরব প্রবাসীনী কমলা বেগম তার মেয়ে মৌ আক্তার মিতুকে প্রতিমাসে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা করে পাঠাতেন। ঘাতক রুবেল বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে মিতুর কাছ থেকে জোর পূর্বক টাকা নিতো। গত সপ্তাহে প্রতি মাসের মতো এমাসেও টাকা পাঠিয়েছেন।
গতকাল সোমবারে রুবেল সেই টাকা চেয়ে, না পেয়ে মিতুর সাথে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে রুবেল ছুরি বের করে মিতুকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখন করতে থাকে। এমন সময় মিতুকে বাঁচাতে তার বড় খালা ওই এলাকার সোলায়মানের স্ত্রী আলেয়া বেগম (৬০) ও খালাতো ভাই নিরব হোসেন(২১) বাঁচাতে এগিয়ে আসলে খালা আলেয়া বেগমকে পেটে ও শ্যালক নিরবের হাতে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় রুবেল। প্রতিবেশীরা তাদেরকে উদ্ধার করে আক্কেলপুর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসার সময় পথিমধ্যে মিতুর বড় খালা আলেয়া বেগম মারা যায় এবং মিতুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স যোগে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে দুপচাঁচিয়া নামক স্থানে সেও মারা যায়, অন্য দিকে আহত মিতুর খালাতো ভাই নিরব হোসেন জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। ঘাতক জামাই রুবেল হোসেন পলাতক।
নিহত মিতুর মামা মো: খায়রুল চৌধুরী (৫২) বলেন, ঘাতক জামাই রুবেল টাকার জন্য মাঝে মধ্যে আমার ভাগ্নীকে ছুরি (চাকু) দিয়ে হত্যার ভয় ভীতি দেখাতো আমি এর আগেও কয়েকবার তাদের ঝগড়া মারামারির মিমাংসা করে দিয়েছি। কয়েক দিন আগে আমার মেজবোন বিদেশ থেকে আমার ভাগ্নী মিতুর একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিল সেই টাকা নিয়ে রুবেল ও মিতুর মধ্যে ঝগড়া লাগে আজ সোমবার সেটাকে কেন্দ্র করে রুবেল আমার ভাগ্নীকে চাকু দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করতে থাকে এমন সময় আমার বড় বোন ও ভাগ্নে বাঁচাতে গেলে তাদেরকেও সে ছুরিকাঘাত করে। প্রতিবেশীসহ আমি তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় আমার বড় বোন মারা যায় এবং ভাগ্নী মিতু বগুড়াতে নিয়ে যাওয়ার সময় মারা যায়।
হাসপাতালে কর্মরর্তা মেডিকেল অফিসার ডা. মাকসুদুর আলম আকন্দ (সানী) বলেন, আলেয়া হাসপাতালে আসার আগে মারা গিয়েছে। আমরা পরিক্ষা করে দেখি সে মৃত, মৌ আক্তার মিতুর অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পথিমধ্যে দুপচাঁচিয়া উপজেলা পার হবার সময় মিতু মারা যায় এবং নিরবকে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মিতুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ও আলেয়ার পেটের বাম দিকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নয়ন হোসেন বলেন, গৃহপরিচারিকা কমলা বেগমের পাঠানো টাকা নিয়ে তার মেয়ে ও জামাই এর মধ্যে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে রুবেল স্ত্রী মিতুকে ও বড়খালা শ্বাশুড়ি এবং খালাতো ভাই নিরবকে ছুরিকাঘাত করে রুবেল পালিয়ে যায়। প্রথমে তার খালা শ্বাশুড়ি ও পরে স্ত্রী মারা যায়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে ও ঘাতক রুবেলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মুন টাইমস নিউজের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে Google News অনুসরণ করুন
মতামত