সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মেঘনা ইট ভাটা সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে চলছে ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ । মেঘনা ইট ভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, সংরক্ষিত, আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করেছে অবৈধ মেঘনা ইট ভাটা।
শুধু তাই নয়, মেঘনা ইট ভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে ছোট ব্যারেলের (টিনের) চিমনি।
এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র।
আইন অমান্য করে দিনের পর দিন মেঘনা ইট ভাটার সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রভাবশালী হাত বদল করে দীর্ঘ বছর যাবৎ চলছে এই মেঘনা ইট ভাটা।
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মেঘনা ইট ভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। ফলে একদিকে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে বন, অন্যদিকে উর্বরতা হারিয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে আবাদী জমি। অনিয়শ্চতা দেখা দিয়েছে আগামীর ভবিষ্যতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেঘনা ইট ভাটার শ্রমিক বলেন, সাধারণত মেঘনা ইট ভাটায় বছরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার ইট পোড়ানো হয়। আর প্রতি ৮ হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় এক হাজার ঘনফুট মাটি। তা ছাড়া তারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে সংগৃহীত কাঠ এসব ভাটায় জোগান দেন। গড়ে প্রতিটি গাছ থেকে সাত থেকে আট মণ কাঠ পাওয়া যায়।
মেঘনা ভাটায় ঘুরে দেখা গেছে, আম, জাম, আকাশ মনিসহ তিন শতাধিক ফলজ ও বনজ গাছ পোড়ানো হচ্ছে প্রতিদিন।
অথচ বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭-এর ৭ ধারা অনুযায়ী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড জেল বা লাইসেন্স বাতিল ও ইট ভাটা বাজেয়াপ্ত করারও বিধান রয়েছে। কাগজে-কলমে এসব আইন বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে উল্টো নীতিতে বন ও পরিবেশ অধিদফতরসহ জেলা-উপজেলা প্রশাসন।
এদিকে, ইট ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-তে বলা হয়েছে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, হাট-বাজার এলাকা; সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর এবং বন, অভয়ারণ্য, বাগান, জলাভূমি ও কৃষি জমিতে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। সংরক্ষিত বনের ১০ কিলোমিটারের বাইরে ইট ভাটা করার বিধান থাকলেও খোদ সংরক্ষিত বনে ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেই রয়েছে অধিকাংশ ইট ভাটা। আইনের তোয়াক্কা না করেই অধিকাংশ ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ফসলি জমিতে।
ইট ভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ ছাড়াও স্থানীয়রা কাশি, সর্দি, অ্যাজমা, ডায়রিয়া ও এলার্জির মতো নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইটভাটায় ঝিকঝাক পদ্ধতি অনুসরণ না করার কারণে ভাটার আশপাশের ফসলি জমির উৎপাদন দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। ধানের চেয়ে চিটার পরিমাণ বেড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সরকার ফসলি জমির ওপর ইট ভাটা স্থাপন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে এসব জমির উৎপাদন শূন্যে নেমে আসবে।
স্থানীয়রা আরও বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে অসুস্থতা বেড়েছে।
মুন টাইমস নিউজের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে Google News অনুসরণ করুন
মতামত