সারাদেশ

বাম হাতে লিখে জিপিএ-৫ পেয়েছে হুজাইফা

বাম হাতে লিখে জিপিএ-৫ পেয়েছে হুজাইফা

ছবি : মুন টাইমস নিউজ


প্রকাশিত : ২৩ মে ২০২৪, বিকাল ৩:০৭

হুজাইফার জন্মলগ্ন থেকে ডান হাত নেই। বাম হাতে লিখেই পড়াশোনা চালিয়ে আসছে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার এই কিশোর। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তার হওয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় হুজাইফা মোল্লা। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হুজাইফা। তার ডান হাতের কুনুইয়ের নিচের অংশ নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কিংবা দরিদ্রতা; কোনোটাই তাকে হার মানাতে পারেনি। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি শ্রেণিতেই দিয়েছে মেধার পরিচয়। হুজাইফা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ভানুরকান্দা গ্রামের কৃষক মনজুর রহমান ও শাহানা দম্পতির ছেলে। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন প্রত্যেক শ্রেণিতেই প্রথম হয়েছে। এরপর সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম হয়ে ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। পরে অষ্টম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হলেও দশমে শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি হুজাইফার চলার পথে কখনও কখনও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দরিদ্রতা। তবে সে প্রমাণ করতে চায়, ইচ্ছা থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কিংবা দরিদ্রতা- কোনোটাই বাধা নয়। হুজাইফা বলেন, জন্ম থেকেই আমার ডান হাত নেই। আমি বাম হাত দিয়ে সকল কাজকর্ম করি। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে আমি পড়াশোনা চালিয়ে আসছি। বাম হতে লিখে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। আমার ইচ্ছা বড় হয়ে মানুষের সেবা করার জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার। আমি প্রমাণ করে দিতে চাই, ইচ্ছা আর চেষ্টা থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই কখনও বাধা হতে পারে না। আমি দরিদ্রতার কারণে কোন প্রাইভেট পড়তে পারিনি এমনকি গাইড বইও কিনতে পারিনি তেমন। বোর্ড বই পড়ে ও অনলাইনে ক্লাস করে এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছি। বাবা কৃষক তবে মাঝে মধ্যে অসুস্থ্য থাকেন তাই বাবার কৃষি জমিতে দিনের বেশির ভাগ সময় দিতে হয়। কৃষিকাজের পাশাপাশি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এমনকি বাবা অসুস্থ্য থাকায় মাঝে মধ্যে গ্রামের মসজিদে ইমামতিও করতে হয়। আমার ইচ্ছেটাকে পূরণ করতে আমাকে আরো প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে, তবে দারিদ্রতা আমার বাধা হযে দাড়াইছে। আপনাদের সাহায্যে পেলে আমি অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারি। ছেলের ফল প্রকাশের পর কথা হয় হুজাইফার বাবা মনজুর রহমান বলেন, ছোট থেকে হুজাইফা মোল্লা পড়ালেখায় মেধাবী। তার ডান হাত না থাকলেও সংসারের সকল কাজ করে পরিবারে সহযোগিতা করে আসছে। সে কখনও নিজেকে প্রতিবন্ধী কিংবা শারীরিকভাবে অক্ষম মনে করে না। তবে পরিবারে অভাব-অনটন থাকায় আমরা তাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। তবে তার লক্ষ্য পূরণে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। তার ফলাফলে আমরা খুব খুশি হয়েছি। সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, হুজাইফা আমার বিদ্যালয়ের অন্যতম মেধাবী শিক্ষার্থী। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সে হার মানতে রাজি নয়। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় বাম হাত দিয়ে লিখেই সে প্রথম দ্বিতীয় স্থানে থাকতো। বিদ্যালয় থেকে তাকে উপবৃত্তিসহ সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সে অনেক ভালো পর্যায়ে যাবে বলে মনে করি। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, হুজাইফাকে সমাজসেবা দপ্তর থেকে আর্থিক ভাতা করে দেওয়া হয়েছে। বাম হাত দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পাওয়ায় অন্যান্য প্রতিবন্ধীরাও তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে বলে মনে করি। আমরা সবসময় তার পাশে আছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাবেদ ইকবাল হাসান বলেন, উপজেলার সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র হুজাইফা মোল্লা জন্মলগ্ন থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে বাম হাত দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থাকে তাকে পড়াশোনা করার জন্য সাহায্য করবে। আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আলম বলেন, সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্র হুজাইফা মোল্লা এবার এসএসসি পরিক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে অতান্ত মেধাবী ছাত্র, পড়াশোনার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। তাকে যদি একটু সাপোর্ট দেওয়া যায় তাহলে সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তার পরিবারে উপার্জন ব্যক্তি তার বাবা। তিনি একজন দিনমজুর তার পক্ষে হুজাইফার পড়াশুনার খরচ চলানো কষ্ঠ সাধ্য। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হুজাইফাকে জিজ্ঞেসা করা হয়েছিল সে কি করতে চাই? তখন সে বলে নটরডেম কলেজে পড়াশোনা করতে চায়, পরে সে উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবে এবং সে প্রশাসনে আসতে ইচ্ছুক। উপজেলা প্রশাসন সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে আছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলতে চাই নটরডেম কলেজে ভর্তির জন্য তার যদি কোচিং এবং আর্থিক সাহয্যের প্রয়োজন হয় উপজেলা প্রশাসন ও আমি তাকে সার্বিক সহযোগীতা করব। ভবিষ্যতেও তার পড়াশোনার অগ্রগামীর জন্য কোন সাহয্যের প্রয়োজন হলে অবশ্যাই উপজেলা প্রশাসন তাকে সাহায্যে করবে।  
মুন টাইমস নিউজের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে Google News অনুসরণ করুন