সারাদেশ

শাহজাদপুরে শিশু লামিয়া হত্যায় জড়িত মামা আরাফাত গ্রেপ্তার

শাহজাদপুরে শিশু লামিয়া হত্যায় জড়িত মামা আরাফাত গ্রেপ্তার

প্রকাশিত : ৫ জুন ২০২৫, রাত ১১:৫৮

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের ছোট বিন্যাদাইর গ্রামে লামিয়া খাতুন (৬) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে শাহজাদপুর থানা পুলিশ। সেই সাথে পুলিশের গোয়েন্দা জালে গ্রেপ্তার হয়েছে এ হত্যার সাথে জড়িত নিহতের মামা আরাফাত হোসেন (১৬)। ঘাতক আরাফাত ওই গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে ও নিহত লামিয়ার মা মিনা খাতুনের আপন চাচাতো ভাই। সে বাঘাবাড়ি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্র।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহজাদপুর থানা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক জনাকির্ণ সংবাদ সম্মেলনে শাহজাদপুর থানা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(এএসপি) মো: কামরুজ্জামান উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এ সময় শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসলাম আলী উপস্থিত ছিলেন।

এএসপি মো: কামরুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গতকাল ৩ জুন দুপুর আড়াইটার দিকে ঘাতক মোঃ আরাফাত হোসেন আওয়ামীলীগ নেত্রী রূপা রহমানের ভাঙ্গা ও পরিত্যক্ত বাড়ির একটি কক্ষে বসে বিড়ি খাচ্ছিল। এ সময় শিশু লামিয়া সেখানে জামরুল কুড়ানোর জন্য যায়। শিশু লামিয়া সেখানে গিয়ে আরাফাতের বিড়ি খাওয়া দেখে ফেলে। ফলে সে আরাফাতের বাবা অর্থাৎ লামিয়ার নানা ইউনুস আলীকে বিড়ি খাওয়ার কথা বলে দিবে বলে জানায়। আরাফাত এ সময় লামিয়াকে বিড়ি খাওয়ার কথা তার বাবাকে বলে দিতে না করে। কিন্তু লামিয়া আরাফাতের কথা না শুনে তার নানাকে বিড়ি খাওয়ার কথা বলে দিতে রওনা হয়। এ সময় আরাফাত পিছন থেকে লামিয়াকে ধরে ফেলে এবং লামিয়ার মুখ সজোরে চেপে ধরে। এতে লামিয়া নিশ্বাস নিতে না পেরে মাটিতে পড়ে যায়। এরপর লামিয়ার সাথে থাকা গামছা লামিয়ার মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর লামিয়ার হাফ প্যান্ট খুলে আরাফাত তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। লামিয়া নড়াচড়া না করলে সে নিজ বাড়ি থেকে কস্টেপ এনে লামিয়ার দুই হাত পিছনে নিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর নাক দিয়ে রক্ত বের হওয়ায় কস্টেপ দিয়ে নাক বেধে দেয়। এরপর সে লামিয়ার লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে। সে ওই ঘরের জানালা দিয়ে লামিয়ার লাশ বের করে সেফটিট্যাংকের মধ্যে ফেলে দিয়ে ঢাকনা লাগায়ে দেয়। এরপর সে বাড়ি ফিরে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে থাকে। লামিয়াকে যখন খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন সবার সাথে আরাফাতও এদিক ওদিক খোজাখুজি করে।

এএসপি মো: কামরুজ্জামান আরও বলেন, ঘাতক আরাফাত হোসেন শিশু লামিয়া হত্যার কথা স্বীকার করে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এই চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক হত্যার বর্ণনা দিয়েছে। এ ঘটনায় নিহত লামিয়ার বাবা মোঃ নাজিম সরকার বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

তিনি বলেন, নিহতের মামা মোঃ খোকন গত ৩ জুন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তার ভাগ্নি হুজাইফা ইসলাম লামিয়া খাতুন (৬) কে কোথাও খুজে না পেয়ে শাহজাদপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তিনি বলেন, লামিয়ারা এক ভাই ও এক বোন। লামিয়া বড়। তার বাবা ও মা গাজীপুরের কাশিমপুর ডিভিএল গ্রুপের একটি ফ্যাক্টরিতে চাকুরি করেন। এ কারণে লামিয়া ও তার ছোট ভাইকে তার নানা-নানী উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের ছোট বিন্নাদায়ির গ্রামের নিজ বাড়িতে দেখাশোনা করেন। লামিয়া পাশ্ববর্তী খামার শানিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণী ছাত্রী। থানায় জিডি হওয়ার পর শাহজাদপুর থানা পুলিশ তদন্তে নেমে ওই গ্রামের আওয়ামীলীগনেত্রী রূপা রহমানের ভাঙ্গা ও পরিত্যক্ত বাড়ির টয়লেটের সেফটিট্যাংকের ভিতর থেকে শিশু লামিয়ার হাত বাধা ও মুখে কস্টেপ পেচানো লাশ এবং নিহতের ব্যবহৃত হাফ প্যান্ট ও এক জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করে। এছাড়া ছোট বিন্যাদাইর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে পুলিশের গোয়েন্দা জালে লামিয়া হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে আরাফাত হোসেনকে আটক করে। এরপর তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এই চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক হত্যার রহস্য বেড়িয়ে আসে।