সারাদেশ

চলনবিলে ধান কাটা শেষে কৃষকদের খড় বিক্রির ধুম

চলনবিলে ধান কাটা শেষে কৃষকদের খড় বিক্রির ধুম

ছবি : চলনবিলে কৃষকের খড়ের পালা বিক্রি ধুম


প্রকাশিত : ৩০ মে ২০২৫, রাত ১০:৪৫

চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জে তাড়াশে বোর মৌসুমের ধান কাটার পর মাড়াই শেষে খড় দিয়ে গাদা তৈরির রেওয়াজ বহু আগের। কয়েক বছর আগেও জমির মালিকেরা এসব খড় মানুষকে বিনা মূল্যে দিয়ে দিতেন। তবে এখন সময় বদলে গেছে। খড়ও হয়েছে মূল্যবান বস্তু। শুষ্ক মৌসুমে মাঠে ঘাস না থাকায় এখন খড়ের চাহিদা ব্যাপক। তাই এখন আর কেউ খড় বিনা মূল্যে দিতে রাজি নন। ফলে ধান কাটা শেষে এখন কৃষকদের মধ্যে খড় বিক্রির ধুম পড়েছে।

আজ শনিবার সকালে  উপজেলা কুন্দইল গ্রামের   শফিকুল ইসলাম নিজ বাড়িতে কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে খড়ের গাদা তৈরি করছিলেন। তিনি বলেন, ধানের চেয়ে এখন খড়ের কদর বেশি বলা যায়। ১ বিঘা জমিতে ৩৫৯ থেকে ৪০০ আঁটি খড় হয়। একেকটি খড়ের আঁটি তিন থেকে চার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাড়াশে গবাদিপশুর পালন বেড়ে যাওয়ায় খড়ের দামও বেড়েছে।

উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোর মৌসুমের ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। তবে এখন ধান বিক্রির চেয়ে খড় বিক্রির প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বেশি। কারণ, কিছুদিন পরেও ধান বিক্রি করা যাবে। তবে দ্রুত কাঁচা খড় বিক্রি করা গেলে বাড়তি আয়ের সুযোগ পাবেন কৃষকেরা।

উপজেলার দিঘী সগুনা গ্রামের কৃষক সোলেমান হোসেন জানান,  ‘কয়েক বছর আগেও আমরা খড় মানুষকে ফাও দিয়ে দিতাম। এখন আর কেউ ফাও চাইলে দিই না। ধান দিতে রাজি আছি কিন্তু খড় দিতে রাজি নই। খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা ধান চাষেও লাভবান হচ্ছি।’

উপজেলার মাগুরা বিনোদ গ্রামের কৃষক  শাজাহান আলী জনান, ‘এ বছর ১১ বিঘা জমি থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার খড়ের আঁটি পেয়েছি। নিজের গরুর জন্য দুই হাজার আঁটি রেখে দিয়ে বাকি আড়াই হাজার আঁটি প্রতি পিস তিন টাকায় বিক্রি করেছি।’

উপজেলার মানিকচাপর গ্রামের চাষি আফসার আলী  জানান, ‘ধান তো পরেও বিক্রি হবে। কিন্তু খড় যত কাঁচা, তত দাম বেশি। তাই ধান ঘরে রেখে খড় আগে বিক্রি করছি।’

আফসার আলীদের মতো  উপজেলার অধিকাংশ চাষিই এখন খড় বিক্রিতে বেশি উৎসাহী। হাটবাজারে ধান নিয়ে অনেক সময় বসে থাকতে হয়। কিন্তু ধান কাটার আগেই খড়ের খদ্দের জুটে যায়।

উপজেলায় কাস্তা গ্রামের জিল্লুর রহমান জানান, আগে আশপাশে খালি জমি ছিল। ঘাসের অভাব ছিল না। এখন জমি পড়ে থাকে না। ঘাসের জমির অভাব, তাই খড়ের দামও বেড়ে গেছে। বাজারে গরুর খাবারের দাম বেশি। আমার ছয়টি গরু আছে। এর মধ্যে একটি দুধেল গাভি। প্রতিদিন ৩০-৩৫ আঁটি খড় লাগে।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তাড়াশ উপজেলায় গবাদিপশু আছে প্রায় ৭০ হাজার। খাবার হিসেবে প্রতিটি গরুকে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় আঁটি খড় দিতে হয়। বিশেষ করে গাভির জন্য খড় খুবই উপকারী। এ জন্য কৃষকেরা বাজার থেকে কেনা গোখাদ্যের চেয়ে ধানের খড়কে বেশি গুরুত্ব দেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, তাড়াশ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ২২ হাজার ৫১২হেক্টর জমিতে বোর ধান আবাদ হয়েছে। ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা  মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এ সময় এলাকায় ঘাসের সংকট থাকে। তাই গোখাদ্য হিসেবে খড়ের আঁটির চাহিদা আছে।