ভোলা সদর মডেল থানার হাজতে ধর্ষণের অভিযোগে আটক মো. হাসান (২৫) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ দাবি করছে, সে হাজতের বাথরুমে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে পরিবারের অভিযোগ, এটি পরিকল্পিত হত্যা এবং পুলিশের গাফিলতির কারণেই এই মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার রাত সোয়া ১২টার দিকে ভোলা সদর মডেল থানার হাজতে এ ঘটনা ঘটে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাইন পারভেজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন দুপুরে হাসানের বাড়িতে ফ্রিজে মাংস রাখতে যান এক নারী। সে সময় হাসান তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা হাসানকে আটক করে মারধর করে এবং পরে পুলিশে সোপর্দ করে।
পুলিশ বিকেলে হাসান ও ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর রাতেই হাসানকে থানার হাজতে রাখা হয়।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, রাত ১২টা ১৮ মিনিটের দিকে হাজতের বাথরুমে গিয়ে জায়নামাজ পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে হাসান। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ বলছে, থানার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হাসান হাজতের ভেতরে দাঁত দিয়ে জায়নামাজ ছিঁড়ে নিয়ে বাথরুমে ঢোকে। এর আগে হাজতের সামনে থাকা রডের সঙ্গেও সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। তবে বাথরুমে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই, ফলে আত্মহত্যার মুহূর্তের কোনো ফুটেজ নেই।
এছাড়া, হাসানকে থানায় নেওয়ার পর থেকে হাসপাতালে পৌঁছানোর সময় পর্যন্ত কোনো ভিডিও ফুটেজও পুলিশের কাছে নেই।
হাসানের পরিবারের দাবি, এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যা। তার মা শাহনাজ পারভীন বলেন, আমার ছেলে পুলিশের কাছে বারবার অনুরোধ করেছিল, 'স্যার, আমি একটু আমার মা এবং বউয়ের সঙ্গে কথা বলব, মোবাইলটা একটু দেন।' কিন্তু পুলিশ ফোন দেয়নি, খাবারও দেয়নি। আমার ছেলে যদি দোষীও হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্তু তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো কেন?
হাসানের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী বলেন, আমাদের বিয়ের মাত্র দেড় মাস হয়েছে। জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের কারণে ওই নারী মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ এনেছে। আমার স্বামী আত্মহত্যা করেনি, পুলিশ যদি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করত, তাহলে সে বেঁচে থাকত।
এ ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি নেই বলে দাবি করেছেন ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মো. শরীফুল হক। তিনি বলেন, এটি সুইসাইড। হাজতের বাথরুমে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে আসামি হাসান। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
তবে, ঘটনার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
হাসানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের দাবি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসা উচিত। অন্যদিকে, স্থানীয়দের মধ্যে এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
মতামত