নোয়াখালীর হাতিয়ায় তিন জেলেকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে ডাকাত সাজানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে।
পরে তাদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে অস্ত্রসহ ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর পুলিশে সোপর্দ করা হয় তাদের।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়নের কাদেরিয়া সুইচগেইট এলাকায় সরকারি ব্যারাক হাউজে এ ঘটনা ঘটে।
আহত তিনজন হলেন—ফখরুউদ্দিন (২৮), শাহারাজ (২৭) ও মো. কাউসার (২৭)। তারা সকলেই পেশায় জেলে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ঘটনার দিন বিএনপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি হাসান মাঝি দীর্ঘদিন পর কারাগার থেকে মুক্তি পান। তাকে দেখতে তার বাড়িতে যান ফখরুউদ্দিন, শাহারাজ ও কাউসার। এই ঘটনায় প্রতিপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে রাত ১০টার দিকে তাদের উপর হামলা চালায়।
হামলার পর তিনজনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পেটানো হয় এবং জোরপূর্বক ডাকাতি স্বীকারের ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে তাদের হাতে একটি ভুয়া রকেট লঞ্চার ধরিয়ে ডাকাত সাজানোর চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
হাতিয়া থানার প্রধান ফটকে জেলে কাউসারের মা জাহেরা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে সারাদিন নদীতে মাছ ধরে। তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ নেই। কিন্তু সেদিন রাতে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাকে পিটিয়ে ডাকাত বানানো হলো। বারবার কাকুতি-মিনতি করেও ছেলেকে বাঁচাতে পারিনি।
জাহাজমারা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, আমি নিশ্চিত নই যে থানায় সোপর্দ করা তিনজন ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তবে বিগত সরকারের আমলে তারা অপরাধে জড়িত থাকতে পারেন।
বিএনপি নেতা হাসান মাঝি অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ব্যারাকে বসবাসরত অনেকেই আমাকে দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ কেবল তিনজনকে বেছে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে পুলিশে দেয়।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হুদা জানান, তিনজনকে ডাকাত হিসেবে থানায় সোপর্দ করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে পূর্বে কোনো অপরাধের রেকর্ড পাওয়া যায়নি। তারা যেটি নিয়ে ছিলেন, সেটি কোনো রকেট লঞ্চার নয়, বরং সমুদ্রে ব্যবহৃত প্যারাস্যুট সিগনাল বাতি।
তিনি আরও বলেন, তিনজনকে তাদের স্বজনদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে জাহাজমারা ফাঁড়ির ইনচার্জকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মতামত