অপরাধ

ময়মনসিংহে অপহরণ ও মুক্তিপণ চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার

ময়মনসিংহে অপহরণ ও মুক্তিপণ চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশিত : ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সন্ধ্যা ৬:০২

ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অভিযানে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

এ সময় অপরাধে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং নগদ ৮৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। ডিবির ইনচার্জ মো. আবুল হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানের বিষয়ে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।

গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে ‘দৈনিক প্রথম আলো’র ময়মনসিংহ আঞ্চলিক ব্যবস্থাপককে দিঘারকান্দা বাইপাস থেকে অপহরণ করে একটি চক্র। তাকে একটি প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। অপহরণকারীরা ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে এবং তার কাছে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর তারা তার মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের ফোন করে বিকাশের মাধ্যমে দুই লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। পরে তাকে ত্রিশাল থানাধীন চেলেরঘাট এলাকায় আহত অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

এই ঘটনার পর গাজীপুর, শ্রীপুর, মাওনা, ভালুকা ও ফুলপুর এলাকায় একই কৌশলে একাধিক অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করে। ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি দল চক্রটিকে শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য অভিযান শুরু করে।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি চক্রটি আবারও একজনকে অপহরণের উদ্দেশ্যে বের হলে গোপন সূত্রে তাদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এরপর ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি ত্রিশাল, ভালুকা-গফরগাঁও সড়ক এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা ও শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের চার সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন— মো. শাহাদত হোসেন (৪৬), যার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা এলাকায় এবং বর্তমানে গাজীপুরে বসবাস করছে; আব্দুস সালাম (৪৫), যার স্থায়ী ঠিকানা একই এলাকায়; মো. শিখন আলী (২০), শেরপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা; এবং মো. আবু তাহের (৩৫), যিনি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বাসিন্দা।

গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং নগদ ৮৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। চক্রের মূল হোতা শাহাদত হোসেন প্রায় আট বছর আগে মাওনা বাসস্ট্যান্ডে প্রাইভেটকার চালক থাকা অবস্থায় এই অপরাধচক্রে যুক্ত হয়। বিভিন্ন সময় একই কৌশলে ৫০টিরও বেশি অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করেছে। এ সময়ে সে তিন দফায় প্রায় দুই বছর কারাভোগ করে। সর্বশেষ কাশিমপুর কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় আবু তাহেরের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং দু’জনে একসঙ্গে কারাগার থেকে বের হয়ে পুনরায় অপহরণ কর্মকাণ্ড শুরু করে।

শাহাদতের বড় ভাই সালাম এবং তার আত্মীয় শিখন এই কাজে তাকে সহযোগিতা করত। তারা ভিকটিমকে গাড়িতে তোলা, মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া এবং পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা আদায়ে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করত। তাদের ব্যবহৃত বিকাশ একাউন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত দুই মাসে তারা প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার লেনদেন করেছে।

অভিযান পরিচালনার সময় চক্রটির আরও ছয়জন সক্রিয় সদস্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।