সিরাজগঞ্জের তাড়াশে জমে উঠেছে ক্ষিরার মৌসুমি হাট। সারাদেশেই রয়েছে এই ক্ষিরার চাহিদা। ক্ষিরার ভালো ফলন হলেও দাম নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৪৭৫ হেক্টর জমিতে ক্ষীরার চাষ করা হয়েছে, যা গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৫ হেক্টর বেশি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বীজ, সার ও কীটনাশক সঠিক সময়ে পাওয়ায় ক্ষীরার বাম্পার ফলন হয়েছে। ক্ষিরাকে কেন্দ্র করে তাড়াশ উপজেলার দিঘুড়িয়া গ্রামে গড়ে উঠেছে সব চেয়ে বড় ক্ষিরার মৌসুমি হাট। এ হাটে প্রতিদিন ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার এসে ক্ষিরা কিনে নিয়ে যান।
সরেজমিনে দেখা যায়, তাড়াশ উপজেলার কোহিত, তালম সাতপাড়া, সাচানদিঘি, সান্দুরিয়া, খোসালপুর, বারুহাস, নামো সিলট, দিঘড়িয়া, দিয়ারপাড়া, খাসপাড়া, রানীদিঘী, তেঁতুলিয়া ও বরগ্রামে মাঠের পর মাঠ ক্ষিরার আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশী আবাদ হয়েছে বারুহাস ইউনিয়নে। দিঘুড়িয়া এলাকায় ক্ষিরা বিক্রি করার জন্য মৌসুমী ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছে সবচেয়ে বড় আড়ৎ। প্রতিদিন ভোর থেকে বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা এই আড়ৎ এ ক্ষিরা আনেন বিক্রি করার জন্য। বিভিন্ন জেলার পাইকাররা ও স্থানীয় পাইকাররা ক্ষিরা কিনতে আসেন এই আড়ৎ এ। সাধারনত দুপুরের পর শুরু হয় ট্রাক লোড, এরপর ট্রাক যোগে ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ক্ষিরাগুলো চলে যায়। প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টন ক্ষিরা যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে। বারুহাস ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের ক্ষিরা চাষি মুকুল বলেন, গত মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে ক্ষিরা চাষ করেছিলাম। লাভ ভালোই হয়েছিল তাই এবার ৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ফলনও বাম্পার হয়েছে। সাধারনত ১ বিঘা জমিতে ক্ষিরা চাষে খরচ হয় ২০ হাজার টাকার মতো। গত বছর এক বস্তা (৪০কেজি) ক্ষিরা বিক্রি হতো ১১০০টাকা থেকে ১২০০টাকা বর্তমানে ৬০০টাকা থেকে ৭০০টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে সময়ের সাথে দামটা আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতে তারা ক্ষিরা চাষে আগ্রহ হারাবে।
দিঘরিয়া গ্রামের ক্ষিরাচাষি মজনু সরকার বলেন, গত বছর ১ বিঘা জমিতে ক্ষিরা চাষ করেছিলাম লাভ ভালোই হয়েছিল তাই এবছর ৩ বিঘায় ক্ষিরা চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে।
সান্দ্রা গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, আমি তিন বছর ধরে ক্ষিরার চাষ করে আসছি। অন্য ফসলের চেয়ে ক্ষিরা চাষে লাভ বেশী হওয়ার কারণে প্রতি বছরই ক্ষিরা চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ মণ করে ক্ষিরার ফলন হবে বলে আশা করছি। অন্য বছরগুলোতে লাভ হলেও, যেহেতু সব কিছুর দামই বেশি সে হিসাবে ক্ষিরার দাম কম তাই অনেকেই ক্ষিরা চাষে আগ্রহ হারাবে।
ঢাকা থেকে দিঘুড়িয়া ক্ষিরার হাটে আসা পাইকার শামসুল আলম জানান, প্রতিবছর এই এলাকার ক্ষিরা নিয়ে ঢাকা শহরে বিক্রি করি। এই এলাকার ক্ষিরা সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর চাহিদা বেশি।
বারুহাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান, দিঘুড়িয়া আড়ৎ থেকে বিভিন্ন জেলার পাইকাররা ট্রাকে করে ক্ষিরা কিনতে আসেন। এলাকার ক্ষিরা সাধারণত ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। এ আড়ৎ থেকে শুধু রাজধানী ঢাকায়, প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ মে. টন ক্ষিরা যাচ্ছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উপজেলার ফসলী জমি ক্ষিরা চাষের জন্য উপযোগী। কৃষি অফিসের লোকজন সার্বক্ষণিক কৃষকদেরকে ক্ষিরা চাষে উৎসাহ, পরার্মশ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগীতা করে আসছেন। কৃষকরা অন্যান্য কৃষি দ্রব্যের তুলনায় ক্ষিরা চাষে লাভবান হতে পারেন।
মতামত