বাংলাদেশের গ্রাম-বাংলার এক সময়ের পরিচিত দৃশ্য ছিল তালগাছের মাথায় ঝুলন্ত বাবুই পাখির বাসা। এই বাসাগুলো ছিল নিখুঁত কারিগরি শিল্প, যা দেখে যে কাউকে মুগ্ধ করত। কিন্তু কালের বিবর্তনে এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে এখন আর সেই দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না। সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে একসময় হাজারো বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। তবে এখন সেই দিনগুলি আর নেই।
বাবুই পাখি, যা কারিগর পাখি হিসেবে পরিচিত, তার বাসা তৈরির দক্ষতা সত্যিই অসাধারণ। বাবুই পাখির বাসা দেখতে অনেকটা উল্টানো কলসির মতো। এই পাখি বাসা বানাতে অনেক পরিশ্রম করে। ঘাস দিয়ে আস্তরণ তৈরি করে, তারপর ঠোঁট দিয়ে ঘষে গোলাকার অবয়ব মসৃণ করে। বাসা বানানোর জন্য এই পাখি বিভিন্ন ধরনের উপকরণ যেমন খড়, ঝাউ, তালের কচিপাতা ও কাঁশবন ব্যবহার করে। বাসার গঠনটি অত্যন্ত জটিল, কিন্তু শক্তিশালী।
এছাড়া, বাবুই পাখি তার বাসায় জোনাকি পোকামাকড় ধরে এনে রাখে, যাতে রাতে আলোর ব্যবস্থা হয়। এই কারণে এই পাখিটিকে বুদ্ধিমান পাখি বলা হয়। বাবুই পাখির বাসার স্থাপনা এমনভাবে হয় যে তা শুধু সুন্দরই নয়, একেবারে শক্তিশালীও।
তবে, পরিবেশগত পরিবর্তন, বিশেষ করে তাল, খেজুর ও নারিকেল গাছের বিলুপ্তি এবং বাবুই পাখির শিকার বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন এই পাখি বিলুপ্তির পথে। এক সময় সিরাজগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে তালগাছ এবং খেজুর গাছে অসংখ্য বাবুই পাখির বাসা দেখা যেত, কিন্তু এখন আর সেসব দৃশ্য চোখে পড়ে না।
বাবুই পাখির বাসা, তার নির্মাণ পদ্ধতি এবং এই পাখির চিরকালীন সুরেলা কিচিরমিচির শব্দ গ্রাম-বাংলার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। কিন্তু পরিবেশগত বিপর্যয় এবং মানুষের অসচেতনতায় এসব সুন্দর রূপবৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। তাড়াশের প্রবীণ ব্যক্তি তছিরন (১০১) বলেন, এক সময় তাড়াশের বিভিন্ন অঞ্চলে দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির বাসা দেখে মানুষ মুগ্ধ হতো, কিন্তু এখন আর সেই দৃশ্য পাওয়া যায় না।
বাবুই পাখির বিলুপ্তি এবং গ্রাম-বাংলার পরিবেশের বদল এক বিপর্যয়কর চিত্র উপস্থাপন করছে। যদি এখনই সচেতনতা না বৃদ্ধি পায়, তবে আরও অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ হারিয়ে যেতে পারে, এবং সেই সঙ্গে বাংলার ঐতিহ্যবাহী জীববৈচিত্র্যও বিলীন হয়ে যাবে।
মতামত