সারাদেশ

সিরাজগঞ্জে তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা অনুষ্ঠিত

সিরাজগঞ্জে তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত : ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত ৯:৩৪ আপডেট : ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত ১০:৪৯

সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন স্বাদের দই নিয়ে এই মেলায় ভিড় জমিয়েছেন ক্রেতারা। 

রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়ক ও তাড়াশ বাজারে দই বিক্রি চলে।

মেলায় ক্ষীরসা দই, শাহী দই, টক দই, শ্রীপুরী দইসহ নানা স্বাদের দই কেনার জন্য ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। ঐতিহ্য ধরে রাখা এই মেলাটি আগামী দিনে আরও বড় পরিসরে আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন দই প্রেমীরা।

জানা যায়, প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে সরস্বতী পূজার দিন শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলার আয়োজন করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়কে বসে এই ঐতিহ্যবাহী মেলা।

অপরদিকে, চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশে তৎকালীন জমিদার পরম বৈষ্ণব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম এই দই মেলার প্রচলন করেন। স্থানীয়দের মতে, জমিদার রাজা রায় বাহাদুর নিজেও দই ও মিষ্টান্ন ভালোবাসতেন। 

অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য ঘোষদের তৈরি সুস্বাদু দই পরিবেশন করা হতো। এরপর থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দই মেলার আয়োজন শুরু হয়।

মেলায় অংশ নেওয়া সুস্বাদু দইয়ের পরিবেশক রনি মিষ্টান্ন ভান্ডারের রনজিত ঘোষ বলেন, আজ ১৫ মণ দই এনেছি। চাহিদা এত বেশি যে দুপুরের মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা করছি। তবে দুধ, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ ও দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে।

বেলকুচি উপজেলার রাজাপুরের দই ব্যবসায়ী সুশান্ত ও রনজিত ঘোষ বলেন, রাজাপুর ও এনায়েতপুরের দইয়ের সুনাম রয়েছে। তাই আমাদের দইয়ের চাহিদা বেশি। মেলা একদিনের হওয়ায় সব দই বিক্রি হয়ে যায়, বরং চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়।

দই কিনতে আসা শহরের বাসিন্দা সঞ্জয় সাহা বলেন, প্রতি বছর সরস্বতী পূজার দিন দই মেলা বসে। আত্মীয়-স্বজনদের জন্য দই কিনি। এই দিনে পরিবার নিয়ে দই-চিড়া-মুড়ির আয়োজন করি।

এছাড়া, সুরজিত সাহা জানান, প্রতি বছর সকালে এই মেলা থেকে দই কিনি। এবছরও অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য দই কিনছি।

দীপক কর বলেন, বোন ও জামাইসহ আত্মীয়-স্বজন এসেছে। এখানকার দই খুব সুস্বাদু, তাই প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ কেজি দই কিনি। যদিও এবছর দইয়ের দাম কিছুটা বেশি, তবুও চাহিদা প্রচুর।

জুনায়েত আহমেদ সবুজ বলেন, মুজিব সড়কের দই কিনতে এসেছি। প্রতিবছর এখানকার দই কিনি, কারণ এগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু। এই ঐতিহ্য ধরে রাখা উচিত।

সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, প্রায় তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাঘ মাসের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এই মেলা বসে। সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশে আনন্দঘন পরিবেশে মেলার আয়োজন হয়েছে।