গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে গত ১৭ দিন ধরে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন লালমনিরহাটের অজ্ঞাত এক কিশোর। ৩১ জানুয়ারি, শুক্রবার দুপুরে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করেন।
গাইবান্ধা রেলওয়ে বিভাগ, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল এবং গাইবান্ধা নারী ও শিশু কল্যাণ সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ১৪ জানুয়ারি রাতে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন অজ্ঞাত কিশোর। স্টেশন কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য এবং গ্রাম পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের মতে, ওই কিশোরের মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে তিনি অচেতন অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন এবং উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
এ ঘটনায় গাইবান্ধা নারী ও শিশু কল্যাণ সংস্থা তার পাশে দাঁড়িয়ে শুরু থেকে সকল ব্যয় বহন করছে এবং তার পরিবারের সন্ধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল রোডের হেলথ্ প্লাস ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসে এবং কিশোরের জন্য বিনামূল্যে সিটি স্ক্যান, এক্সরে এবং রক্ত পরীক্ষা পরিচালনা করে।
বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হক কিশোরের পরীক্ষা-নীরিক্ষার রিপোর্ট দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করেন। বর্তমানে কিশোরটি গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর পাশাপাশি জেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সিএফএইচ হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মানবিক বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিরা কিশোরটির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
গাইবান্ধা নারী ও শিশু কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কায়সার প্লাবন জানান, রংপুর সিআইডির একটি বিশেষ টিম ১৭ জানুয়ারি ঘটনাটি তদন্ত করতে গাইবান্ধা আসে এবং কিশোরের আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করে। তবে কিশোরটি ভোটার না হওয়ায় তার পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তবে একটি ভিডিওতে কিশোরটি তার বাড়ি লালমনিরহাট বলে উল্লেখ করে, জানায় যে তার বাবা ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন এবং মা অন্যের বাসায় কাজ করেন। ভিডিও দেখে কিশোরটি কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে পারে বলে মনে হয়েছে।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল রোডের হেলথ্ প্লাস ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সিইও মোস্তাক আহমেদ মাছুম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিশোরটির ব্যাপারে জানতে পারার পর মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেন্টারটি তার পরীক্ষা-নীরিক্ষা বিনামূল্যে পরিচালনা করেছে।
এদিকে, বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হক জানান, কিশোরটির মাথায় রক্তক্ষরণ হয়ে রক্ত জমাট বেঁধেছে, মাথার হাড় এবং কোমরের হাড় ভেঙে গেছে, এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেছে। এজন্য তাকে দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হবে। তার চিকিৎসা এখানেই সম্ভব, কিন্তু হাড়ের চিকিৎসক দেখাতে হবে।
শজিমেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন ডা. এস. এম. নূর-ই শাদীদ সিঞ্চন অজ্ঞাত কিশোরকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন।
মতামত