প্রেম কেবল গল্প-উপন্যাস কিংবা সিনেমার চরিত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বাস্তবেও সত্যিকারের ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার শিক্ষক এটিএম মোস্তফা। গত ১৯ বছর ধরে স্ত্রীর কবরের পাশেই বসবাস করছেন তিনি, যেন মৃত্যুর পরও প্রিয়তমাকে এক মুহূর্তের জন্যও ছেড়ে যেতে চান না।
রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ইংরেজি শিক্ষক এটিএম মোস্তফার স্ত্রী রেখা বেগম ২০০৬ সালের ১৪ নভেম্বর মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। বাড়ির প্রবেশপথের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়। সেই থেকে স্ত্রীকে স্মরণ করে দিন কাটাচ্ছেন মোস্তফা।
পরিবারের সদস্যরা জানান, মোস্তফা-রেখা দম্পতির দাম্পত্য জীবন ছিল অত্যন্ত সুমধুর। একে অপরকে ছাড়া কখনো রাত কাটাননি তারা। স্ত্রী মৃত্যুর পর মোস্তফা আর কোথাও স্থায়ীভাবে যাননি। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে দ্রুত ফিরে আসেন এবং স্ত্রীর কবরের পাশে গিয়ে বসেন, দোয়া করেন।
ছেলে রাজীব ফেরদৌস শুভ্র জানান, তার বাবা ১৯ বছর ধরে মায়ের কবরের পাশেই সময় কাটাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত দোয়া-ইবাদতে ব্যস্ত থাকেন এবং কোরআন খতম করেছেন ৯৫ বার।
এটিএম মোস্তফা বলেন, মানুষটা চলে গেছে অনেক দিন হলো, কিন্তু ভালোবাসা চলে যায়নি। তার মৃত্যু আমার জীবনটা ফাঁকা করে দিয়েছে। যতদিন বেঁচে থাকব, তার কবরের পাশেই থাকব।
উপজেলার নওদাবস উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোবাশ্বের আলম লিটন বলেন, মোস্তফা স্যার স্ত্রীর জন্য তাজমহল নির্মাণ করেননি, তবে ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছেন।
এটিএম মোস্তফার এই আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার গল্প প্রমাণ করে, প্রকৃত প্রেম কেবল বইয়ের পাতায় নয়, বাস্তব জীবনেও বিরলভাবে দেখা যায়।
মতামত