ছবি : সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে ইউএনও রনী খাতুন
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে স্থানীয় বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। বুধবার বিকালে উপজেলার ইসমাইলপুর এলাকায় বিএনপি নেতা আশেক-ই এলাহী মুন্নার বাড়ির সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় দু’পক্ষের ইট বৃষ্টির মধ্যে পড়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর ও ইউএনও’র বডিগার্ড আনছার সদস্য সাইফুল ইসলামসহ ২২জন আহত হয়। সংঘর্ষ এড়াতে এর আগে প্রশাসন শ্যামনগর সদরে ১৪৪ ধারা জারি করে। আহতদের মধ্যে আনছার সদস্য সাইফুলসহ পথচারী মেহেদী, বিএনপি কর্মী, আব্দুর রশিদ, আব্দুল মজিদ ও আব্দুর রাজ্জাককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রানী খাতুনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা এলাকায় টহল দেয়।
এর আগে বিএনপির বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে তখন রীতিমত ইট বৃষ্টি চলছে। ঢাল সড়কি নিয়ে সড়কের দুই প্রান্তে অবস্থান নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে মত্ত উভয় শিবির। পুলিশ ও সেনাবাহিনী কিছুটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চেষ্টা চালাচ্ছেন সংঘর্ষে লিপ্ত পক্ষদ্বয়কে নিবৃত করতে। এরই মধ্যে গাড়ি থেকে নেমে জ্যাকেট কিংবা হেলমেট ছাড়াই দৌঁড় জুড়লেন উভয় পক্ষের মধ্যবর্তী স্থানের উদ্দেশ্যে।
রীতিমত চমকে দেয়ার মতো এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন। একজন নারী কর্মকর্তা হয়েও কোন ধরনের নিরাপত্তা সামগ্রী ছাড়াই ‘বাটল ফিল্ডে’ তার এমন উপস্থিতি চমকে দিয়েছে সবাইকে। সাহসিকতাপূর্ণ তার এমন ভুমিকার জন্য সাধারণ মানুষসহ দু’পক্ষই রীতিমত তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বুধবার বিকাল পাঁচটার দিকে এমন দুঃসাহসিক কান্ড ঘটিয়ে রনী খাতুন এখন শ্যামনগরের মানুষের কাছে ভাইরাল ইউএনওর খেতাব পেয়েছেন।
শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সদ্য ঘোষিত উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ বুধবার উপজেলা সদরে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। এমন খবরে দুপুরের দিক থেকে বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মীরা উপজেলা সদরের বিভিন্ন প্রান্তে লাঠিশোটা নিয়ে অবস্থান নিতে থাকে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকাল সাড়ে চারটার দিকে বিএনপি নেতা সোলায়মান কবীরের নেতৃত্বে একটি মিছিল বিএনপি নেতা আশেক-ই এলাহী মুন্নার বাড়ির অতিক্রম করছিল। এসময় অজ্ঞাত স্থান থেকে মিছিলের উপর একটি লাঠি ছুড়ে মারার পর দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় উভয় পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাত পুলিশ ও সেনাসদ্যদের নিয়ে উভয় পক্ষকে নিবৃত করার চেষ্টা চালায়। এসময় শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবীরসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২২জন আহত হয়। একপর্যায়ে বিএনপি নেতা আশেক-ই এলাহী মুন্না ও আ.লীগ কর্মী আহমদ আলী কয়ালের বাড়ি ভাংচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী উৎপল ও শাহাজানসহ অপারপর সংবাদকর্মীরা জানান, বংশীপুর থেকে নেতাকর্মীরা শ্যামনগরে প্রবেশের পথে প্রশাসনের বাধায় পিছু হটে। একপর্যায়ে তারা ফিরে যাওয়ার সময় ইসমাইলপুর এলাকায় পৌছে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। এসময় খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উক্ত নারী কর্মকর্তা নিজের দেহরক্ষী আনছার সদস্যসহ সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের পিছু ফেলে দৌড়ে চলে যান সংঘর্ষের মধ্যে। এসময় তার পাশে থাকা সাইফুল নামের এক আনছার সদস্য বুকে ও শ্যামনগর থানার ওসি হুমমায়ুন কবীর পায়ে ইটের আঘাতপ্রাপ্ত হলেও দ্রুত মাঝখানে পৌঁছে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এসময় তার উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ পক্ষদ্বয় কিছুটা রণে ভঙ্গ দেওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ আল রিফাতকে সাথে নিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় উভয় পক্ষকে ঘটনাস্থল থেকে হটিয়ে দেন।
এবিষয়ে সোলায়মান কবীরের পক্ষের যুবদল সভাপতি সফিকুল ইসলাম দুলু জানান, একজন নারী হয়ে তিনি অনেক সাহসী ভুমিকা রেখেছেন। কিভাবে তিনি এমন দুঃসাহসিকতা দেখালেন বোঝা যাচ্ছে না।
আব্দুল ওয়াহেদ পক্ষের জেলা বিএনপির সদস্য আশেকই এলাহী মুন্না জানান, অলৌকিকভাবে ইউএনও ম্যাডাম রক্ষা পেয়েছেন। তার সাহসী ভূমিকার কারণে পরবর্তীতে সংঘর্ষ থামানো গেছে বলেও মন্তব্য করেন এ বিএনপি নেতা।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন জানান, তিনি জ্ঞাতসারে এমন কাজ করেছেন। আরও বেশি ক্ষতি হওয়ার আগেই সংঘাত থামাতে কাউকে না কাউকে পদক্ষেপ নিতে হতো। তিনি সকলকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজার রাখার আহবান জানান।
মতামত