সারাদেশ

এপ্রিলে বাউফলে ডায়রিয়া আক্রান্ত পাঁচ শতাধিক শিশু

এপ্রিলে বাউফলে ডায়রিয়া আক্রান্ত পাঁচ শতাধিক শিশু

ছবি : মুন টাইমস নিউজ


প্রকাশিত : ৩ মে ২০২৪, দুপুর ২:৩৪

দিয়ান দাসের বয়স চার মাস দশ দিন। গত ২৮ এপ্রিল হঠাৎ করেই তার বমি,পাতলা পায়খানা বেড়ে যায়। ২৯ এপ্রিল সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে দিয়ান ডায়রিয়া আক্রান্ত বলে চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি দেয়। এভাবেই বলছিলেন দিয়ানের মা বাউফল পৌরসভার বাসিন্দা কবিতা দাস। তার ধারণা গরম বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থা হতে পারে। এদিকে হাসপাতালের বারান্দায় ৫ বছর বয়সী কলি আক্তার নামক একটি মেয়েকে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। মেয়েটিকে কিছুক্ষণ আগেই ভর্তি করা হয়েছে বলে জানালেন তার মা মোর্শেদা বেগম। তারও হয়েছে ডায়রিয়া। আর লক্ষণ দিয়ান দাসের মতই অভিন্ন। তবে ডায়রিয়া রোগের কারণ হিসেবে সে তেল জাতীয় খাবার খাওয়াকে দুষছে। পাশেই ছিল ১৫ মাস বয়সী জারিফ হোসেন। তাকে নিয়ে আশা হয়েছে দশমিনা উপজেলা থেকে। ভর্তির আগের দিন হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার লক্ষণ বেড়ে যায়। জানিয়েছেন তার মা সুমা বেগম। এদিকে চারদিন আগে ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হওয়া পাঁচ মাস বয়সী আবদুর রহমান এখন সুস্থতার পথে। এপ্রিলে পটুয়াখালীর বাউফলে হঠাৎ করেই বেড়ে যায় শিশুদের ডায়রিয়া আক্রান্তের হার। তবে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং হাসপাতালের সংস্কার কাজ চলায় বিপাকে পরেছেন রোগী ও তার স্বজনরা। চিকিৎসার অভাবে একজন শিশুর মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল মাসজুড়ে ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৩৮৬ জন রোগী যার মধ্যে ১৭৪ জনই শিশু। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এপ্রিল মাসজুড়ে হাসপাতালে ভর্তি ছাড়াও বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বাসায় বসে চিকিৎসা নিয়েছে ৯ শতাধিক ডায়রিয়া রোগী যার মধ্যে ৪ শতাধিক শিশু রয়েছে। যার অনেকেই হাসপাতালে জায়গা না থাকায় চলে গিয়েছে। এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মেডিকেল অফিসার ডাঃ নুর জাহান বলেন, ‘তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকায় ডায়রিয়া রোগী অনেক বেশি ভর্তি হচ্ছে। যেহেতু আমাদের ৫০ শয্যার হসপিটাল হসপিটাল আমাদের রোগী আছে ৭৪ জনেরও বেশি। তাই ৩০ জনের অধিক রোগীকে বারান্দায় রাখতে হয়। ভাইরাসটি হয় গরমের সময় তাই সুস্থ্য হতে ৭ দিন লেগে যায়। বেশিরভাগ পানিশূন্যতায় ভুগছে বাচ্চা এবং বয়স্করা। তাদের যখন ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসা হয় তখন পালস রেট থাকে না বললেই চলে,দেখা গেছে তখনই তাদের স্যালাইন আর হাতে ক্যানোলা লাগিয়ে উপরে পাঠাতে হচ্ছে। এত খারাপ অবস্থা। সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন প্রান্তে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলছেন দু-দিন আগেই তাদের ডায়েরিয়া ইউনিটে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর মত এবারের আক্রান্তের হার অভিন্ন, তবে এবার অনেক শিশুর মধ্যে কলেরার সিম্পটম পাওয়া গেছে। ডায়রিয়ার অনেকগুলো কারণ থাকে, তার মধ্যে কলেরা অন্যতম। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে।’ শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় কি এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ম্যাসেজ সব সময় চারটি।
১) খাদ্য তৈরি, সংরক্ষণ, পরিবেশন এবং গ্রহণ। এ চারটি ক্ষেত্রেই নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে। ২) এই গরমের মৌসুমে যতদিন বৃষ্টি না হবে ততদিন মানুষ পুকুর, ডোবা, নদীর পানি ব্যবহার করতে পারবে না। তাদের অবশ্যই গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করতে হবে। ৩)খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে পরিস্কারভাবে। রাস্তার আশেপাশের খোলা তরল খাবার খাওয়া যাবে না। যেমন: শরবত, তরল পানীয় ইত্যাদি। ৪) নিজে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং পরিবারের সবাইকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কতটা তৎপর এমন প্রশ্নে ডাঃ প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন,‘এ বিষয়ে আমরা শতভাগ তৎপর। আমাদের পর্যাপ্ত স্যালাইন রয়েছে, ইনজেকশন রয়েছে। নার্স,ওয়ার্ড বয়রা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। আর একটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও সে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই মারা যায়। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে কারো মৃত্যু হয়নি।’  
আরও পড়ুন: নওগাঁ প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে মাঠেই কৃষকের মৃত্যু