সারাদেশ

তাড়াশে গণহারে পুকুর খনন: সংকটে সেচ প্রকল্প ও কৃষি উৎপাদন

তাড়াশে গণহারে পুকুর খনন: সংকটে সেচ প্রকল্প ও কৃষি উৎপাদন

প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, বিকাল ৩:০৪

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ উপজেলায় গণহারে পুকুর খননের কারণে আবাদি জমি কমে গিয়ে শতাধিক সেচ প্রকল্পের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব প্রকল্পের কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। কৃষি জমি পুকুরে রূপান্তরিত হওয়ায় ফসল উৎপাদনেও দেখা দিয়েছে সংকট।

প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি ব্যবহার করে আদি পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করতেন কৃষকরা। কিন্তু ৮০ দশক থেকে নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়ার কারণে তারা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার ফলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। তবে, অতিরিক্ত পানি ব্যবহারের কারণে ৯০ দশকের মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নেমে যায়।

ডিজেলচালিত সেচ ব্যবস্থা ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় কৃষকদের জন্য বিদ্যুৎচালিত সেচ প্রকল্প চালু করে সরকার। বিএডিসি এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে ৫৯৭টি গভীর নলকূপ, ১৩১৮টি শক্তিচালিত পাম্প এবং ৩১৭৮টি ব্যক্তিগত অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে ১ লাখ ৮২ হাজার হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসে।

কিন্তু গত এক দশকে এসব সেচ প্রকল্পে বিপর্যয় নেমে এসেছে। তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জে পুকুর খননের কারণে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর কৃষি জমি হারিয়ে গেছে। এছাড়া, পানি নিষ্কাশনের অভাবে আরও ৫ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। পুকুর খননের ফলে গভীর নলকূপের অনেক প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সরেজমিনে উল্লাপাড়ার বানিয়াখৈর এলাকায় দেখা গেছে, বিএডিসি পরিচালিত তিনটি গভীর নলকূপের মাঝে প্রায় ১০০ বিঘার একটি পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে সেচ প্রকল্পগুলো কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ পুকুর খনন করেছেন।

তাড়াশ উপজেলার বোয়ালিয়া, মঙ্গলবাড়িয়া ও রায়গঞ্জ উপজেলার আমশড়া মাঠেও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক সোলায়মান হোসেন অভিযোগ করেন, আমাদের মাঠে আর আবাদি জমি অবশিষ্ট নেই। ফলে সেচ প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী চিত্ত রঞ্জন রায় জানান, পুকুর খননের কারণে অনেক সেচ প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এসব প্রকল্প পুনরায় সচল করার জন্য অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পুনঃস্থাপনের কাজ চলছে। তবে এতে সরকারের আর্থিক ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ জা মু আহসান শহীদ সরকার বলেন, গণহারে পুকুর খননের ফলে কৃষি জমি কমে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনসচেতনতা বাড়াতে হবে, অন্যথায় কৃষিতে দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব পড়বে।