জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হাইকোর্টের নির্দেশে চেয়ারম্যান প্রার্থী নাজমা আখতার লাকীর বাড়িতে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার জন্য নোটিশ নিয়ে লোক পাঠিয়েছিলেন জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুল করিম। উচ্চ আদালতের আদেশের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নোটিশ পাওয়ার পর নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩০মিনিটে রির্টানিং ও জেলা নির্বাচন অফিসে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন লাকী এবং তাৎক্ষণিক যাচাই বাচাই শেষে তাঁকে ঘোড়া মার্কা প্রতীক দেওয়া হয়। রির্টানিং ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে এ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী (ঘোড়া মার্কা) প্রতীক নাজমা আখতার লাকী জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের আওয়ালগাড়ী গ্রামের আব্দুস সামাদ মন্ডলের মেয়ে। লাকী ২০০৩ সালে রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের ৭,৮,৯ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য।
ওই প্রার্থী সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারন নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি নেন নাজমা আখতার লাকী। সেই মোতাবেক তিনি নির্বাচনী তপসীল অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ১৫ এপ্রিল ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের অনলাইনে আবেদন করার সময় সার্ভারে জটিলতা দেখা দেয়। পরবর্তীতে চেষ্টা করেও নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে তিনি মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে ব্যার্থ হন।
এর পর গত ২২ এপ্রিল তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহনের উদ্দেশ্যে হাইকোর্টে একটি রীট আবেদন করেন। ওই রীট আবেদন হাইকোর্ট আমলে নিয়ে গত ২৩ এপ্রিল শুনানী শেষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান এবং বিচারপতি কে.এম জাহিদ সারোয়ারের যৌথ বেঞ্চ জয়পুরহাট জেলা রির্টানিং কর্মকর্তাকে আদেশপত্র প্রাপ্তির দুই দিনের মধ্যে ওই প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়ার আদেশ দেন।
এ ছাড়া ওই প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা না নেওয়ার কথিত ব্যর্থতার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিবালয়ের সচিব, জয়পুরহাট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে ওই আদেশে। এরপর রির্টানিং কর্মকর্তা রীটের আদেশের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে জানান। নির্বাচন কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় নাজমা আখতার লাকীর মনোনয়নপত্র গ্রহন করেননি রির্টানিং ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। এরপর মঙ্গলবার নাজমা আখতার লাকী আবারও উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন।
বুধবার দুপুরে রির্টানিং ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুল করিম নাজমা আখতার লাকীর মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার জন্য নোটিশ নিয়ে তাঁর বাড়িতে তাদের প্রতিনিধি পাঠান এবং নোটিশ পাওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩০মিনিটে জয়পুরহাট রির্টানিং ও জেলা নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দেন নাজমা আখতার লাকী। তৎক্ষণিক যাচাই বাচাই শেষে লাকীকে ঘোড়া মার্কা প্রতীক দেয় রির্টানিং ও জেলা নির্বাচন অফিস।
নাজমা আখতার লাকী বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে আমার মনোনয়ন পত্র জমা নেননি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে আবারও আদালতকে বিষয়টি জানালে আদালত পূনরায় আমার মনোনয়নপত্র জমা নিতে রির্টানিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের প্রতিনিধি মাধ্যমে আমাকে নোটিশ পাঠায়। আমি আজ মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছি। যাচাই বাচাই শেষে আমাকে ঘোড়া প্রতীক দেওয়া হয়েছে।
আরও বলেন, আমি আবারও হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবো আগামী ৮মে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের জন্য। কারণ আমি আক্কেলপুর উপজেলার ১ লক্ষ ২২হাজার ৮৪২ ভোটারের কাছে এত কম সময়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমাকে নিয়ে জনগণের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে।
রিটার্নিং ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুল করিম বলেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে একটি নোটিশ দিয়ে লোক পাঠিয়েছি এবং ফোন করেছি। তার প্রেক্ষিতে আজ বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন এবং তাৎক্ষণিক ভাবে যাচাই বাবাই শেষে মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণা করে তাঁকে ঘোড়া প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আক্কেলপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী বর্তমানে ৩জন।
মতামত