পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) প্রশাসন বর্তমানে সংস্কার কার্যক্রমে মনোযোগ দেওয়ার বদলে বিতর্কিত পুনর্বাসন কার্যক্রমে ব্যস্ত বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুম সংকট, আবাসন ব্যবস্থার দুরাবস্থা, টিএসসি ও হলের ক্যান্টিন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার সম্মুখীন হলেও এসব বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং প্রশাসন বিগত সরকারের বিতর্কিত কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের পুনর্বাসনের কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস.এম. হেমায়েত জাহান এবং জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক মো. জামাল হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অনিয়ম, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পুনর্বহাল এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগ উপেক্ষা করার অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বহিষ্কৃত অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসানকে পুনর্বহাল করার ঘটনাটি এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গ, কর্মচারী বিধিমালা লঙ্ঘন, এবং দায়িত্ব পালনে গাফিলতির মতো একাধিক অভিযোগ ছিল। অথচ জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক জামাল হোসেনের সুপারিশে তার বহিষ্কারাদেশ ২০২৪ সালের ১৫ আগস্টে বাতিল করা হয়।
অন্যদিকে, বিতর্কিত কর্মকর্তা শামসুল হক রাসেলকেও পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে। তার বিরুদ্ধে অতীতে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের হেনস্থা করার অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা তার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করলেও প্রশাসন শেষ পর্যন্ত তার পুনর্বহাল নিশ্চিত করে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের দমন করার অভিযোগে বিতর্কিত ড. সন্তোষ কুমার বসুকে ছুটিতে পাঠিয়ে দায়মুক্তি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ছিল। কিন্তু প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি, বরং তাকে দায়মুক্তি দিয়ে বিতর্কিত পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস.এম. হেমায়েত জাহান এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে বলেন, আগের রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্তের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বাধ্য হচ্ছি। তবে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি দেওয়া হবে।
অন্যদিকে, উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ভেতরে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে কাজ না করে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়গুলো আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের বদলে প্রশাসনের এমন আচরণ হতাশাজনক। ক্লাসরুম সংকট ও আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রশাসনের উদ্যোগহীনতা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে।
মতামত