নাটোরের লালপুরের বসন্তপুর বিল একসময় ফসল উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত ছিল। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি খাল খনন করা হয়, যা রঘুনাথপুর, হাসেমপুর ও আকবরপুরের মধ্য দিয়ে চন্দনা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।
এ খালের মাধ্যমে বর্ষার পানি নিষ্কাশিত হতো এবং বিলের জমি বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন করত। কিন্তু ২০১২-২০১৩ সাল থেকে প্রভাবশালীরা বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে সেখানে অবৈধভাবে পুকুর খনন শুরু করে। ফলে বিলের ১০ হাজার বিঘা জমি জলাবদ্ধতায় পড়ে যায় এবং সেখানে ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে বিলটি কচুরিপানা ও জলজ আগাছায় ভরে গেছে। এর ফলে বিলের চারপাশের ২০টি গ্রামের কৃষক ও শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ায় কৃষকরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জলাবদ্ধতার কারণে বর্ষাকালে পানি বন্দি হয়ে পড়ে এসব গ্রাম। দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকার কারণে এলাকায় রোগব্যাধি দেখা দেয় এবং পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
২০১৯ সালে এলাকাবাসী জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে লিখিত অভিযোগ, মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ করেন। একই বছর হাইকোর্ট পুকুর খনন বন্ধে নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। ২০২০ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাময়িকভাবে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৪২টি পুকুরের পাড় কেটে দেন। এরপর ২০২২ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য চন্দনা নদীর সঙ্গে সংযোগ খাল সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। তবে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় প্রকল্পটি অসমাপ্ত থেকে যায়।
স্থানীয় চাষিরা জানান, জলাবদ্ধতার কারণে তাদের জমিতে আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে পুকুর খনন করেছেন। গন্ডবিল গ্রামের মো. বেলাল হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে আমিও পুকুর খনন করেছি। তবে খাল খনন করা হলে সবার জন্যই ভালো হতো।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, অবৈধ পুকুর খননের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বিএডিসি ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কাজ করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, জমি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সাময়িক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
বিলে ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কৃষক ও শ্রমিকরা এখন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসনিক উদ্যোগ সফল হলে আবারও এই বিল ফসল উৎপাদনে ফিরে আসবে বলে আশা করছেন সবাই।
মতামত