বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, যেখানে অসংখ্য নদী, হাওড়, বাওড় এবং পুকুর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই সব জলাশয়ে এক সময় চলত পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
ঠাকুরগাঁওয়ের আঞ্চলিক ভাষায় ‘পলো’ নামে পরিচিত এই মাছ ধরার যন্ত্রটি বাঁশ ও বেতের সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং এর মাধ্যমে বিশেষ শৈল্পিক কারুকার্যপূর্ণভাবে মাছ ধরা হত। শীতের মৌসুমে খাল, বিল, বাওড় ও পুকুরে পানি কমে গেলে গ্রামের লোকেরা দলে দলে পলো নিয়ে মাছ ধরতে নামতেন। যদিও এখনো কিছু জায়গায় পলো দিয়ে মাছ ধরা হয়, তবে তা আগের মতো ব্যাপকভাবে নয়।
এক সময় প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়িতে দু-একটি পলো থাকতো, যা মাছ ধরার পাশাপাশি হাঁস-মুরগী ধরার কাজে ব্যবহৃত হত। বিশেষত পৌষ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত শীতের মৌসুমে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব শুরু হত। তখন প্রত্যেক গ্রামের মানুষ নির্দিষ্ট দিনে একসাথে জড়ো হয়ে পলো দিয়ে মাছ ধরতে নামতেন এবং এক চমৎকার গ্রামবাংলার দৃশ্য তৈরি হত।
বর্তমানে, অনেক হাওর, খাল, বিল এবং জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে, বা মাছ চাষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, ফলে আর সেই ঐতিহ্যবাহী পলো দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য দেখা যায় না। হরিপুর উপজেলার জেলে রবিউল ইসলাম জানান, আগে যে উৎসবটি আনন্দে কাটত, তা এখন বিলুপ্তির পথে।
তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মকে এই সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করানো উচিত, না হলে এটি ইতিহাসের পাতায় চলে যাবে।
মতামত