ছবি : ভায়াট গ্রামে প্রায় ৫০ বিঘা আয়তনের পুকুর খনন করা হচ্ছে
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা উপেক্ষা করে উর্বর কৃষি জমিতে অবাধে পুকুর খনন চলছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ অঞ্চলে প্রায় ১৪,৯৪০ বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে, যা খাদ্য উৎপাদনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে শত শত একর আবাদযোগ্য জমি জলাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ওই জমি চাষাবাদের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে।
তাড়াশের নওগাঁ ইউনিয়নের ভায়াট গ্রামে প্রায় ৫০ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর খনন করা হচ্ছে। মাধাইনগর ইউনিয়নসহ অন্যান্য এলাকাতেও একইভাবে পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে।
ভায়াট গ্রামের কৃষক আকছেদ আলী বলেন, পুকুর খননের কারণে আমাদের আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এমনকি গবাদিপশুর জন্য গোচারণ ভূমিও কমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে খাদ্য সংকটের কারণ হতে পারে।
ঝুরঝুরি গ্রামের কৃষক কালু প্রামাণিকের অভিযোগ, প্রভাবশালীরা মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন করে লাভবান হলেও আমাদের কৃষি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ছে।
তাড়াশ উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. মসগুল আজাদের তথ্যমতে, গত এক দশকে তাড়াশে ৪,২০০টিরও বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে। একই সময়ে ১৪,৯৪০ বিঘা কৃষি জমি হারিয়ে গেছে, যার ফলে ধান উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খালিদ হাসান পুকুর খনন বন্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা জানিয়েছেন, "পুকুর খননের তথ্য পাওয়া মাত্রই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" তবে স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা জরুরি।
তাড়াশে পুকুর খনন কার্যক্রম চলতে থাকলে খাদ্য উৎপাদন, জীববৈচিত্র্য এবং স্থানীয় কৃষকের জীবনযাত্রায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে তাড়াশের কৃষি ও পরিবেশের জন্য এটি বড় বিপর্যয় হতে পারে।
মতামত