সারাদেশ

সালথায় খেজুর রস সংগ্রহে গাছিদের ব্যস্ততা, আশা বাড়তি আয়ের

সালথায় খেজুর রস সংগ্রহে গাছিদের ব্যস্ততা, আশা বাড়তি আয়ের

ছবি : সালথায় খেজুর রস সংগ্রহে গাছিদের ব্যস্ততা, আশা বাড়তি আয়ের


প্রকাশিত : ৪ ডিসেম্বর ২০২৪, সকাল ১১:৩৫ আপডেট : ৪ ডিসেম্বর ২০২৪, সন্ধ্যা ৮:২৭

প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রস্তুত হচ্ছে প্রকৃতি। সেই সঙ্গে খেজুরের সুস্বাদু রস সংগ্রহে প্রস্তুত হতে দেখা যাচ্ছে গাছিদেরও। শীত এলেই গ্রামীণ জীবনের প্রত্যাহিক উৎসব শুরু হয় এই খেজুর গাছকে কেন্দ্র করে। খেজুর রস শীত কালে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকায় যেন এক গুরুত্ব পূর্ণ উপাদান। স্বপ্ন ও প্রত্যাশায় অনেক খানি খেজুর গাছের সঙ্গে চাষীদের অঙ্গাঙ্গীভাবেই বসবাস হয়ে উঠে। 

জানা গেছে এবার সালথায় অন্তত ৩ হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ করছেন শতশত গাছি। শিশির ভেজা ভোরে এসব গাছিরা কোমরে খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জান ও মাটির হাঁড়ি, কেউবা প্লাস্টিকের বোতল বেধে ছুটে যাচ্ছেন রস সংগ্রহ করার জন্য।

জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সকাল-সন্ধ্যায় ৩০ থেকে ৪০ ফিট লম্বা খেজুর গাছে উঠে রস সংগ্রহ করে বাড়িতে আনছেন। পরে সেই রস জ্বালিয়ে সুস্বাদু পাটালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। দামও পাচ্ছেন ভালো। গাছিদের দাবি, রস আর গুড় বিক্রি করে অন্তত ছয় মাস ভালোভাবে চলবে তাদের সংসার। পাশাপাশি আগামী পাঁচ মাসে লাখ টাকা করে আয় হবে প্রত্যেক গাছির।

সালথার হারুন আর রশিদ মিয়া ও রুকমান মোল্যা নামে দুই মুরব্বিরা বলেন, একসময় ফরিদপুরের খেজুরের গুড়ের নাম ছিল সারাদেশে। তখন আমাদের এলাকার প্রতিটি গ্রামের রাস্তার দুই পাশ দিয়ে ও ফসলি জমির আইলে খেজুর গাছের অভাব ছিল না। সে সময় কৃষকরা সকাল বেলা খেজুরের রসে মুড়ি ভিজিয়ে খেয়ে কাজে যেতেন। খেজুরের রস ও গুড়ের দামও কম ছিল। গ্রামের সাধারণ মানুষ রস দিয়ে ক্ষীর-পায়েস ও গুড় দিয়ে পিঠা তৈরি করে খেতেন। তবে একটা সময় এসে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার আগ্রহ হারায় গাছিরা। এতে কমতে থাকে খেজুর গাছের সংখ্যা।

গাছি না পাওয়ায় গৃহস্থরা খেজুর গাছ কেটে ফেলেন। ফলে খেজুরের রস ও গুড় সংকটে পড়ে বাজার। চড়া দাম দিয়েও এখন নির্ভেজাল গুড় পাওয়া মুসকিল।

তারা বলেন, এখন রস ও গুড়ের দাম ভালো হওয়ায় গাছির অভাব নেই। তবে খেজুর গাছের অভাব রয়েছে। কিছু এলাকা ছাড়া কোথাও তেমন খেজুর গাছ নেই। সরকার যদি খেজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেন ও পাশাপাশি গাছিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন, তাহলে খেজুরের রস ও গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব।

সম্প্রতি সরেজমিনে সালথার যদুনন্দী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছিরা ভোরবেলা দড়ি-কাছি, ছ্যান ও দাও নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। গাছে উঠে প্রথমে তারা ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের মাথার সোনালি অংশ বের করছেন। তারপর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে রাসায়নিক কোনও দ্রব্য ব্যবহার ছাড়াই খাঁটি গুড় তৈরি করছেন গাছিদের পরিবারের নারীরা।

স্থানীয় গাছি সাহাদত ফকির ও আল আমিন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় অন্তত তিন শতাধিক খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ চলছে। কৃষি কাজের পাশাপাশি শতাধিক গাছি রস সংগ্রহের কাজে যুক্ত রয়েছেন। অনেক কষ্ট হয় খেজুরের রস সংগ্রহ করতে। তবে দাম ভালো হওয়ায় কষ্ট আর গায়ে লাগে না। খেজুর গাছগুলো ছোলার কাজ শেষে নল স্থাপনের মাধ্যমে হাড়ি পেতে রস সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে গুড় তৈরি করে আমরা বাজারজাতও শুরু করেছি। দামও ভালো পাচ্ছি। আশা করি শীত মৌসুমে রস ও গুড় বিক্রি করে ৬ মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারবো। সেই সাথে সংসার চালিয়ে প্রত্যেক গাছির লাখ টাকা করে বাড়তি আয় হবে।’

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ‘সালথায় এবার অন্তত তিন হাজার খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ চলছে। আমরা গাছিদের একত্রিত করার ব্যবস্থা করছি। আমরা তাদের মানসম্মত গুড় তৈরি করে বাজারজাত করার পরামর্শ দিব। পাশাপাশি কেউ যাতে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে গুড় তৈরি না করে সে বিষয় সকলকে সতর্ক করবো।