সারাদেশ

চলনবিলের শুঁটকির চাতালগুলোতে ভরসা শুধু পুঁটি মাছ।

চলনবিলের শুঁটকির চাতালগুলোতে ভরসা শুধু পুঁটি মাছ।

ছবি : চলনবিলে শুঁটকি তৈরি কাজ করছেন চাতালে নারীরা


প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, সকাল ৮:২১ আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, বিকাল ৪:১০

দেশি মাছের ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত চলনবিলের উজানের মাঠ থেকে  পানি নেমে গেছে। এখন বিলের নিচু এলাকা, বিভিন্ন খাল এবং নদীতে পানি রয়েছে। এসব উৎসে মাছ ধরার মৌসুম চলছে। পুঁটি মাছের আধিক্য থাকলেও অন্য মাছের পরিমাণ কম। ফলে শুঁটকির চাতালগুলোতে ভরসা শুধু পুঁটি মাছ। 

গতকাল বুধবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি বাজার সংলগ্ন শুঁটকির চাতালে গিয়ে ব্যবসায়ী, জেলে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায় এসব বিষয়।

চলনবিল অধ্যূষিত তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি এলাকার শুঁটকির চাতালের প্রায় সবগুলোর বাঁশের চাটাইয়ে পুঁটি মাছ রোদে শুকাতে দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ মাছ পরিস্কার করছেন, কেউ আবার মাছ বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। এখানকার সব ব্যবসায়ীরা এবারে একসাথে  চাতালে মাছের শুঁটকি করছেন। কারণ হিসেবে আবদুল গফুর নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, মাছের আমদানি কম। শুধু পুঁটি মাছের আধিক্য। তাই ব্যবসায়িক ঝুঁকি এড়াতে সবাই একসাথে শুঁটকির চাতাল চালাচ্ছি।

রোদে মাছ শুকানোর কাজ করছেন সবুরা খাতুন, মাফিয়া খাতুনসহ বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিক। তারা বলেন, দিন হাজিরায় কাজ করি। মজুরি পুরুষের চেয়ে কিছু কম হলেও সংসারের জন্য এ টাকা অনেক কাজে লাগে।

শুঁটকির ব্যবসায়ী দেলবর হোসেন, আলম হোসেন, জিল্লুর রহমান বলেন, চলনবিল অধ্যূষিত তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি বাজার ও মৎস্য আড়তের আশপাশে ২৫টি শুঁটকির চাতাল ছিল। গত বছরেও পাঁচটি চাতালে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়েছে। এ বছর মাছের সংকট হতে পারে এমন ভাবনায় ১০ জন ব্যবসায়ী এক হয়ে শুঁটকির জন্য চাতাল করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু পুঁটি মাছের শুঁটকি উৎপাদন করা হচ্ছে বলে তারা জানান। কারণ মৎস্য আড়ত ও স্থানীয় হাট-বাজার ঘুরেও পুঁটি  মাছ ছাড়া অন্য মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি কেজি শুঁটকি ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। এসব শুঁটকি মানুষজন খাওয়ার পাশাপাশি পোল্ট্রি ফিড তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।

ব্যবসায়ীরা গত বছর প্রায় ৩০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন করে বিক্রি করেছিলেন বলে জানান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশগুল আজাদ। তিনি বলেন, এবারে বর্ষার পানি দীর্ঘ সময় ধরে ছিল। তাই এবারে শুঁটকির চাতালে আরো বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

উপজেলার কুন্দইল গ্রামের জেলে ফরহাদ আলী, আবদুল মতিন ও মাকড়শোন গ্রামের মোকছেদ আলী বলেন, বর্ষার কয়েক মাস মাছ ধরে তাদের সংসার চলে। চলনবিলে এই বছর তিনবার বন্যার পানি আসে। ভাদ্র মাসের প্রথম বন্যার পানিতে কিছু মাছ পাওয়া গেছে। আশ্বিন ও কার্তিক মাসের বন্যার পানিতে মাছের পরিমাণ কম। আগে বিল থেকে পানি নামার সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এই বছর উঁচু এলাকা থেকে পানি নেমে বিস্তীর্ণ মাঠ জেগে উঠেছে। কিন্তু মাছের দেখা তেমনভাবে মিলছে না।

তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মর্জিনা ইসলাম বলেন, চায়না দুয়ারি জাল পেতে মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন করায় চলনবিলের মাছ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এই জালে ধরা পড়ছে সাপ, কুঁচে, কাঁকড়া, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুকসহ অধিকাংশ জলজ প্রাণি। জেলেরা মাছ ও কুঁচে বিক্রি করে অন্যান্য জলজ প্রাণী মেরে ফেলছেন। এতে চলনবিলের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। 

চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চলনবিল থেকে চায়না দুয়ারি জালসহ সব নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতে বিলের পানিতে মাছ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেই সাথে জলজ প্রাণি বংশ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারবে না।

উল্লেখ্য, চলনবিলের মিঠা পানির পূঁটি, খৈলসা, চান্দা, মলা, চিংড়ি, টেংরা, গুচি, কাকিলা, টাকি, শোল ও বোয়াল মাছের সুস্বাদু শুঁটকির বেশ কদর রয়েছে দেশজুড়ে।