পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াউপজেলার সদ্য প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় তাফালবাড়িয়া হাসানিয়া আলিমমাদ্রাসার সব পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এ মাদ্রাসায় ১৪ জন শিক্ষক আছেন।পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৩ শিক্ষার্থী; যারা কেউ পাশ করেনি।
জানা গেছে, ১৯৫৮ সালেতাফালবাড়িয়া হাসানিয়া আলিম মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পর ১৯৮৬সালে এমপিওভুক্ত হয়। মাদ্রাসাটিতে বর্তমানে সহকারী অধ্যক্ষসহ ১৪ জন শিক্ষক ও ৬ জনকর্মচারী রয়েছেন। প্রতি মাসে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন নিচ্ছেন সাড়ে ৩ লক্ষাধিকটাকা। প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠানটিতে রেজাল্টের অবস্থা খুবই খারাপ। ম্যানেজিং কমিটিরদায়িত্বহীনতা ও শিক্ষকদের চরম অবহেলায় বহু বছর ধরেই শিক্ষার্থী প্রায় শূন্যেরকোঠায়।
অভিযোগ রয়েছে,প্রতিষ্ঠানের কোঠা ধরে রাখতে যুগ-যুগ ধরে ভাড়া করা শিক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষাদেওয়ানো হয়। যে কারণে বিভিন্ন সময় ২-৩ জন ছাড়া সবাই অকৃতকার্য হয়ে আসছে।
প্রতিষ্ঠানের সহকারীশিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল ক্ষোভের সঙ্গে ঘটনা অকপটে স্বীকার করেন। ইতোমধ্যে বেশকয়েকবার পরীক্ষার হল থেকে ভাড়া করা শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারও করেছেন নির্বাহীম্যাজিস্ট্রেট। যেসব শিক্ষকরা অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন তাদের থেকেসাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মো. খলিলুর রহমান ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো.মঞ্জুরুল হক ১০ হাজার করে টাকা নিতেন বলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মাওলানাজাকারিয়া জানান।
একাধিকবার সরেজমিন গেলেএ মাদ্রাসায় ২-৬ জনের বেশি কখনই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। এমনকি বইগুলোবিভিন্ন কক্ষে এলোমেলো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পাঠদান না দিয়েশিক্ষক-কর্মচারীদেরও একস্থানে বসে খোশগল্পে মেতে থাকতে দেখা গেছে।
সহকারী সিনিয়র শিক্ষকমাওলানা রুহুল আমিন ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মাসুম বিল্লাহসহ একাধিক শিক্ষকরাপ্রতিষ্ঠানের এমন দৈন্যদশার জন্য সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মো. খলিলুর রহমান ওম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতিদের দায়ী করছেন। ম্যানেজিং কমিটি আপনাদের পাঠদানেবাঁধা দিয়েছেন? এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব কেউ দিতে পারেননি।
স্থানীয়রা বলছেন,মাদ্রাসাটি প্রতিদিন খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই।শিক্ষক-কর্মচারীরা গল্পগুজব করে সময় কাটিয়ে বাড়িতে চলে যান। বছরের দুই এক সময়অফিসারেরা আসেন আবার চলে যান। প্রতিষ্ঠানের কোনো উন্নতি দেখলাম না। প্রতিষ্ঠানেরএমন দৈন্যদশা সম্পর্কে একাধিকবার লেখালেখি হলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নিকর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদআলী বলেন, ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর স্কুলে পরীক্ষার্থী ছিল মাত্র ১৩ জন। একজনও পাশকরল না, বিষয়টি দুঃখজনক। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেখা প্রয়োজন।
ম্যানেজিং কমিটির সাবেকসভাপতি মো. মঞ্জুরুল কবির শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেবলেন, জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের কারণে মাদ্রাসার এ অবস্থা। পাঠদানে কেউ বাধা তোদেয়নি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা মীর একেএম আবুল খায়ের বলেন, ম্যানেজিং কমিটি ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কারণেমাদ্রাসাটির এ অবস্থা। আমি চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠানের মান ফিরিয়ে আনার জন্য।
উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম বলেন, তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মতামত