চলনবিল অঞ্চলের তাড়াশ ও রায়গঞ্জ এলাকায় গ্রামীণ আদিবাসী পল্লীর কৃষিজীবী পরিবারগুলোতে উদযাপিত হচ্ছে তাদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব 'সহরাই পরব'। প্রতিবছরের মতো এ বছরও বাড়ির উঠান, দরজা ও গোয়ালঘর সাদা মাটিতে লেপা হয়েছে এবং চালের গুঁড়া দিয়ে নারীরা আলপনা এঁকেছেন।
উৎসবের আগের দিনগুলোতে ঢেঁকিতে চালের গুঁড়া তৈরি, দিয়ালি জ্বালানো, গোয়ালঘরসহ পুরো বাড়ি পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নারীরা। গবাদি পশুগুলোর যত্নও নেওয়া হয়েছে, তাদের গা ধুয়ে শিংয়ে তেল ও সিঁদুর দিয়ে সাজানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই তিন দিনব্যাপী উৎসবের জন্য অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় চলছে সহরাই পরব উদযাপনের প্রস্তুতি। এটি মূলত গোয়াল পূজা হিসেবে পরিচিত, যা বাংলা সনের কার্তিক মাসের অমাবস্যায় পালিত হয়।
এ উপলক্ষে মাহাতো, উরাও, মাহালি সহ বেশ কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠী বংশ পরম্পরায় সহরাই পরব উদযাপন করে আসছে, যেখানে সুখ-সমৃদ্ধি ও শক্তির দেবতা হিসেবে গোয়াল দেবতার পূজা করা হয়।
রায়গঞ্জের পশ্চিম আটঘনিয়া গ্রামের কুড়মালি ভাষার গবেষক উজ্জ্বল মাহাতো জানিয়েছেন, অমাবস্যার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ উৎসব শনিবার ঝুমুর বা জাগানিয়া নাচের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
উৎসবের অংশ হিসেবে, আদিবাসীরা প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং প্রাণীসম্পদের প্রতি তাদের মমত্ববোধ প্রকাশ করেন। গুড়পিপুল গ্রামের মেঘলা মাহাতো ও গুল্টা এলাকার মৌমিতা রানী মাহাতো জানান, এ দিনগুলোতে চাষাবাদে ব্যবহৃত গরুগুলোর প্রতি যত্ন নেওয়া হয়, যা প্রকৃতি ও প্রাণীর প্রতি তাদের ভালবাসার প্রকাশ।
মাধাইনগর গ্রামের স্মৃতি মাহাতো বলেন, হেমন্তকালে জমির মাটি চাষযোগ্য করতে তারা এই গোয়ালপূজা পালন করেন এবং কৃষিজ ফসলের উন্নতি ও সফলতা কামনায় এটি পালন করে থাকেন।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন পালিত হবে মহিষ নাচ, এবং শেষ দিনে ঢাক-ঢোল, বাঁশি ও মাদলের সুরে ঝুমুর বা জাগানিয়া নৃত্যের মাধ্যমে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়বে। শেষ দিনের প্রার্থনা শেষে আতপ চালের খিচুড়ি ও পাঁঠার মাংস, সঙ্গে বিভিন্ন পিঠা দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হবে।
মতামত