আধুনিক যুগে যেখানে প্রযুক্তির উন্নতি দ্রুত এগিয়ে চলেছে, সেখানে এখনো কিছু কৃষক তাদের ফসল রক্ষায় ব্যবহার করছেন সনাতন কাকতাড়ুয়া পদ্ধতি। নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কিছু এলাকার কৃষকরা এখনো বিশ্বাস করেন, কাকতাড়ুয়া (মানুষের প্রতীক) জমিতে পুঁতে রাখলে ফসল ভালো হয় এবং এতে রোগ, পোকা-মাকড় আক্রমণ হয় না। এই কুসংস্কার-ভিত্তিক পদ্ধতি এখনো কিছু অঞ্চলে টিকে আছে।
কেন্দুয়া উপজেলার তারাকান্দিয়া গ্রামের কৃষক ফয়েজ উদ্দিন তার মরিচ ক্ষেতের ফসল রক্ষায় একটি কাকতাড়ুয়া তৈরি করেছেন। এটি দেখতে অনেকটা মানুষের আকৃতির মতো, দু'হাত প্রসারিত এবং মাথার স্থানে খড় ব্যবহার করা হয়েছে। ফয়েজ উদ্দিন জানান, তার বাবা ও দাদারাও এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন, এবং তাদের দেখেই তিনি এটি শিখেছেন। তার বিশ্বাস, কাকতাড়ুয়া ফসলের রোগ প্রতিরোধ করে এবং নজর লাগার সম্ভাবনা কমায়।
কাকতাড়ুয়ার প্রচলন শুধু কেন্দুয়া এলাকায়ই নয়, কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলাতেও এই পদ্ধতি দেখা যায়। এখানকার আমন ধানের ক্ষেতেও কিছু কিছু জায়গায় কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করা হয়, যা দূর থেকে দেখে মনে হয় কেউ জমিতে দাঁড়িয়ে আছে। কৃষকদের বিশ্বাস, কাকতাড়ুয়া ফসলকে রোগ-পোকা থেকে রক্ষা করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকেও সুরক্ষা দেয়।
কাকতাড়ুয়া তৈরির পদ্ধতি বেশ সহজ। বাঁশ, খড়, মাটির হাড়ি, দড়ি এবং পুরনো কাপড় দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। পরে এটি ফসলের জমিতে পুঁতে রাখা হয়, যা দূর থেকে দেখে অবিকল মানুষের মতো মনে হয়। কাকতাড়ুয়া ব্যবহারে জমিতে ইঁদুর ও নিশাচর প্রাণীদের আক্রমণ কমে যায়, ফলে ফসলের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
তবে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি এবং নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল বেশি। তবে কিছু কৃষক এখনো বিশ্বাসের কারণে এই সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, কাকতাড়ুয়া ব্যবহারে কিছুটা কার্যকারিতা থাকলেও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন এ ধরনের পদ্ধতিগুলোর প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দিয়েছে।
মতামত