ভেজালের মাঝে আজও নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের গোগ বাজার এলাকায় ঘানিভাঙা খাঁটি সরিষার তেল পাওয়া যায়। তাও আবার চোখের সামনে দেশি সরিষা ভাঙিয়ে তৈরি করা হচ্ছে খাঁটি সরিষার তেল।
উপজেলার গোগ বাজার এলাকার কয়েকটি পরিবার ঘানিভাঙা খাঁটি সরিষা তেল উৎপাদন করছেন।
ঘানি টানতে ব্যবহার করা হচ্ছে ঘোড়া। ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে চোখ বাধা অবস্থায় ঘোড়া ধীরে ধীরে ঘুরছে, সারা দিন টানছে ঘানি। বেরুচ্ছে তেল। মাঝে মাঝে বাড়ির মহিলারা সংসারের অন্য্যান্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঘানিতে সরিষা দিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে সারা দিন ঘানি ঘুরিয়ে উৎপাদন করছেন খাঁটি সরিষার তেল।
অপরদিকে বাড়ির পুরুষ লোকজন সারা দিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সরিষা সংগ্রহ করেন। এছাড়া পুরুষ লোকজন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সরিষা তেল বিক্রি করে থাকেন। ঘানিভাঙা তেলের ব্যাপক চাহিদার পরও আধুনিক মেশিননির্ভর শিল্প ও প্রযুক্তির প্রসারের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঘানিশিল্প।
এ বিষয়ে ঘানিভাঙার কারিগর ঝরনা আক্তার বলেন, প্রথমে তারা নিজেরা ঘানি ঘুরিয়ে তেল উৎপাদন করতেন। পরে গরু দিয়ে ঘানি ঘুরাতেন। এখন তারা ঘোড়া দিয়ে ঘানি ঘুরাচ্ছেন। এটা তার স্বামীর বাপ-দাদার পেশা, অনেক কষ্টে তারা টিকিয়ে রেখেছেন।
৩০ বছর যাবত এ পেশার সাথে জরিত ঝরনা আক্তার। প্রতিটি ঘানিকে ‘গাছ’ বলা হয়। গাছে একটি বিশেষ আকৃতির ছিদ্রের ভেতর দিয়ে তেল পড়ে এবং তা একটি ড্রামে সংরক্ষণ করা হয়।
প্রতিটি গাছে একবারে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি সরিষা ভাঙা সম্ভব হয়। এই পরিমাণ সরিষা থেকে তেল উৎপাদন করা যায় দেড় থেকে পৌনে দুই কেজির মতো। পাঁচ কেজি সরিষা ভাঙতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। এভাবে দিনে একটি ঘানি থেকে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি সরিষা ভাঙা সম্ভব হয়।
তিনি আরও বলেন, ঘোড়ার খাবার খাওয়ানোর খরচসহ নিজের খরচ চালাতে সারা দিন ঘানি ঘুরিয়ে যে তেল উৎপাদন হয়, তা বাজারে বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায়, তা দিয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা খরচসহ সংসার চালাতে তাদের কষ্ট হয়। তাই তার সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ঘানিভাঙা থেকে খাঁটি তেল নিতে নেত্রকোনা থেকে আসা ফারুক আহমেদ বলেন, এখনকার সময় বাজারে খাঁটি সরিষা তেল পাওয়া যায় না। আমার এক বন্ধু জানিয়েছেন, কেন্দুয়ার গোগ বাজার এলাকায় ঘানি ঘুরিয়ে তেল উৎপাদন করছে একটি পরিবার। তাই খবর পেয়ে খাঁটি সরিষা তেল সংগ্রহ করলাম।
মতামত