সম্প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য ফাঁস ও বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম জড়িত রয়েছে।
রাজধানীর কাফরুল থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার এজাহারে আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৯ জনকে। এ ছাড়া আরও ১৫ থেকে ২০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিও আসামির তালিকায় রয়েছে।
মামলার বাদী এনামুল হক অভিযোগ করেন যে, জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটা বেইজ থেকে ১১ কোটি ২১ লাখ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে তা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় তথ্য বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। পুলিশ ইতিমধ্যে ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি এই ফাঁসকৃত তথ্যের অন্যতম মূল হোতা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, এই চুরিকৃত তথ্য জাতীয় কম্পিউটার কাউন্সিলের দখলে দেওয়া হয় এবং এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তথ্য বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়। অভিযোগ করা হয়েছে যে, ডিজিকন গ্লোবাল এসব তথ্য প্রায় ১৮২টি দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছে, যা ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এই মামলার বিশদ বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত প্রায় ১১ কোটি বাংলাদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা হয়েছে এবং এই চুরিকৃত তথ্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে এই কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন।
মামলায় উল্লেখ করা ১৯ জনের মধ্যে প্রধান আসামি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম এবং অন্যান্য কর্মকর্তার নাম। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রস্তাবের মাধ্যমে আইসিটি বিভাগ নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা নাগরিকদের তথ্যভান্ডারের কানেক্টিভিটি চায় এবং পরবর্তীতে ‘পরিচয়’ নামে একটি অ্যাপ চালু করে এই তথ্য যাচাইয়ের সুবিধা নেয়। এতে এনআইডির তথ্যভান্ডারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এবং ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হয়ে যায়।
উপকমিশনার তালেবুর আরও জানান, তদন্তে এ পর্যন্ত উঠে এসেছে যে আইসিটি বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে আরও গভীর তদন্ত চলছে এবং নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা আছে কি না, তাও যাচাই করা হচ্ছে। জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তদন্তের ফলাফল আরও বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হবে।
মতামত