চলনবিল অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর, যা গরিবের এসি নামে পরিচিত, আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময় এই ঘরগুলো দৃশ্যমান থাকলেও এখন কালের সাক্ষী হয়ে অল্পসংখ্যক মাটির ঘর টিকে আছে। এসব ঘর মজবুত ও আরামদায়ক হওয়ার পাশাপাশি কম খরচে তৈরি করা যেত, যার ফলে গরিব মানুষদের মধ্যে এর ব্যাপক চাহিদা ছিল।
মাটির ঘরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো গ্রীষ্মকালে শীতল এবং শীতকালে উষ্ণতা প্রদান। তাই এগুলোকে গরিবের এসি বলা হতো। এছাড়া এই ঘরগুলো যুগের পর যুগ টিকে থাকত কোনো সংস্কার ছাড়াই। মাটির ঘরের দেওয়ালে আঁকা আল্পনা এবং সযত্নে লেপে রাখা ঘরের দেয়ালগুলো দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠত।
চলনবিলের তাড়াশ, চাটমোহর, গুরুদাসপুর, এবং সিংড়া এলাকায় আগে অধিকাংশ মানুষের বাড়িই ছিল মাটির। এখন গ্রামের ঘরগুলোতে ঢেউ টিন, ইট, বালু, এবং পাথরের ব্যবহার বাড়ছে, যার ফলে মাটির ঘরগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। ফারিদ নামে এক কৃষক বলেন, "আমার সন্তানদের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করলেও, আমি মাটির ঘরেই থাকব। কারণ শীত এবং গ্রীষ্ম দুই ঋতুতেই মাটির ঘর আরামদায়ক।"
মাটির ঘর তৈরি করতেন গ্রামের ঘরামিরা। সাধারণত কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে মাটির ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হতো এবং বর্ষাকালের আগেই তা শেষ করা হতো। বর্তমানে নতুন করে কেউ মাটির ঘর তৈরি করছে না, এবং দক্ষ কারিগরও খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
কালের প্রয়োজনে এবং মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কারণে, মাটির এই ঘরগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। তবে কিছু জায়গায় শতবর্ষ পুরোনো মাটির ঘর এখনও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে, যা একসময় গ্রামের মানুষের আবাসনের প্রধান উপায় ছিল।
মতামত